জন্ম থেকেই নেই দুই হাত। স্বাভাবিক নয় পা-ও। কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতা কখনোই থামিয়ে রাখতে পারেনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের প্রতিভাবান শিক্ষার্থী মানিক রহমানকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমকে সঙ্গী করে জীবনের প্রতিটি ধাপ জয় করে চলেছে মানিক।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাক্রমে ১৯২তম স্থান অর্জন করেছে মানিক। শারীরিক অক্ষমতা মনোবলের পথে কখনোই বাধা হতে পারে না তা প্রমাণ করেছেন তিনি।
এর আগে মানিক নীলফামারীর সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায়ও একইভাবে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এমনকি নিজের ফলাফল নিজেই পা দিয়ে ল্যাপটপ পরিচালনা করে দেখেন তিনি।
মানিক বলেন, ‘আমার দুই হাত নেই, কিন্তু তাতে মনোবল হারাইনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি পা দিয়ে লিখে সবকিছু করি। কখনো নিজেকে পিছিয়ে মনে করিনি। চেষ্টা করেছি প্রতিটি দিনকে কাজে লাগাতে। আমি বিশ্বাস করি, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই জীবনকে থামিয়ে রাখতে পারে না।’
এদিকে মানিকের বাবা মিজানুর রহমান একজন ওষুধ ব্যবসায়ী এবং মা মরিয়ম বেগম একজন কলেজ প্রভাষক। তারা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মানিককে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছি। তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কখনোই দুর্বলতা হিসেবে দেখিনি আমরা। আমাদের বড় ছেলে মানিক শুরু থেকেই নিজের দৃঢ়তা আর অধ্যবসায়ের সব বাধা জয় করেছে। সে আমাদের গর্ব। আমরা চাই, সে যেন সুস্থভাবে এগিয়ে যেতে পারে এবং তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারে।’
মানিক রহমান শুধু ফুলবাড়ীর গর্ব নয়- তার অদম্য, সাহস আর সাফল্য পুরো দেশের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তার জীবনগাঁথা প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে কোনো সীমাবদ্ধতাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়।