এবার ফেসবুক লাইভে এসে বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল (এসকে রুবেল) বলেছেন, ‘যদি ইয়াং হয়ে থাকেন বউ নিয়ে ঘুমাতে পারবেন না।’
শুক্রবার (১৬ মে) লন্ডন থেকে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যে বিপথগামী করা হয়েছে তার পাল্টা জবাব দিতে রেডি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আবার ফিরে আসছি। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষদের একটা সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। এই ৮-৯ মাসে তারা ব্যর্থ। ডামি হিসেবে তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এখন তারা না পারছে সফল হতে, না পারছে বর্তমান ইউনূস গংদের অংশীদার হতে। তাদের নেতা লন্ডন থেকে দেশে আসার পরিকল্পনা করছিল। এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা অচিরেই দেশে আসছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর আপনাদের মতো যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের মিথ্যা অপবাদে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আপনারাও রেডি হন এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটবে।’
‘আমার ইউনিয়নে যারা অযথা নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করিয়েছেন’ তাদের উদ্দেশে সুস্পষ্ট বলি, ‘বাবা-মা নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারবেন না।’
তার এমন বক্তব্যে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা যায়, লন্ডন প্রবাসী মো: সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল দেশে এসে গত ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলার সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেন। তখন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে মামলাও করেছিলেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই তিনি হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। তার দাপটে পুরো ইউনিয়ন ছিল তটস্থ।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ইউনিয়নের ভালুকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে কারচুপির মাধ্যমে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পপিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু প্রশাসন ওই কেন্দ্রটির ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় ভোট কেন্দ্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দায়িত্বরত লোকদের মারধর ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে তিনিসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রশাসন। এরপর থেকে তিনি ছিলেন পলাতক। এক মাস পর ওই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট হলে ব্যাপক কারচুপিতে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পপি। তখন চেয়ারম্যান রুবেল হয়ে ওঠেন সর্বেসর্বা। তার হুমকিতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর তিনি দুই মাসের ছুটি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে জানা যায়, তিনি লন্ডনে চলে গেছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করে গত শুক্রবার নিজের ফেসবুক আইডিতে গৌরীপুরের সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান বোরহানের নাম লিখে আশ্চয্য (!) চিহ্ন দিয়ে পোস্ট দেন। এ বিষয়টি সকলের নজরে এলে চেয়ারম্যানের লাইভে আসার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক বোরহান জানান, কেন চেয়ারম্যান তাকে নিয়ে পোস্ট দিলেন তা বলতে পারছেন না। তবে কয়েকজন জানিয়েছেন, শুক্রবার চেয়ারম্যানের চাচাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আর এই গ্রেফতারে সাংবাদিক বোরহানের হাত রয়েছে ধারণা করেই পোস্ট দিয়ে থাকতে পারেন তিনি। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ওসি আব্দুল মালিক বলেন, ‘তিনি তো লন্ডনে। আর লাইভের বিষয়টি জানা নেই। এখন খোঁজ নিয়ে দেখব তার লাইভ কে কে শেয়ার-কমেন্টস করেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’