কক্সবাজারে বেড়েই চলছে মশাবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব। পৌরসভার মশক নিধন কর্মসূচি বন্ধ থাকায় শহরের আনাচে-কানাচে নালা নর্দমায় মশার প্রজননক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত রোগ। একই সাথে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু।
সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদুল হক বলেন, ইতোমধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই আড়াই হাজারের মতো ডেঙ্গু রোগী স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি নতুন করে করোনা সংক্রমণ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত জেলায় মোট ২ হাজার ৫০৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০৩ জন এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২০৫ জন।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হক জানান, চলতি মাসেই ২৯ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫৬ জন, যার মধ্যে ৭২৬ জন রোহিঙ্গা এবং ১৩০ জন স্থানীয়। এর আগে, মে মাসে আক্রান্ত ছিলেন ৮৪৭ জন, এপ্রিল মাসে ৪২৩ জন, মার্চে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৮৬ জন এবং জানুয়ারিতে ২১৯ জন।
পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পংকজ পাল জানান, ম্যালেরিয়ার চিত্রটিও উদ্বেগজনক। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে আক্রান্ত ছিলেন ২১৫ জন। অথচ চলতি জুনের প্রথম ২৮ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২১৬ জন। এই ছয় মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩১ জন। জুন মাসে আক্রান্ত ২১৬ জনের মধ্যে ১৪২ জন স্থানীয় এবং ৭৬ জন রোহিঙ্গা। ম্যালেরিয়ায় এ বছর এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত)। যদিও জুন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১১ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে পাঁচজন এবং ২০২৩ সালে একজন ম্যালেরিয়ায় মারা যান। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে। বর্তমানে জেলায় ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত, যার মধ্যে পাঁচজন স্থানীয় এবং ১১ জন রোহিঙ্গা।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, করোনায় আক্রান্ত সবাই নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় আইসোলেশন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আক্রান্ত বাড়লে সদর হাসপাতালের আগের ডেঙ্গু সেল পুণরায় চালু করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার বিস্তারের মূল কারণ সচেতনতার অভাব ও পরিবেশের অব্যবস্থাপনা। অপরিষ্কার নর্দমা ও যেখানে-সেখানে পানি জমে থাকা ডেঙ্গুর উৎস। আর ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটছে পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা সংক্রমণের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও করোনার বিস্তার ঠেকাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করেছে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমুহে আলাদা সচেতনতামূলক পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।