চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি ও জিএস সাঈদ বিন হাবিব এক বিবৃতিতে জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিয়ে অবিলম্বে গণভোটের আয়োজন করে রাষ্ট্রসংস্কারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে চাকসু নেতারা বলেন, চব্বিশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত রক্তাক্ত বিপ্লব। কেবল ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, দুর্নীতি রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এ বিপ্লবের মূল ভিত্তি। বিপ্লবী প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও দলীয় একচ্ছত্রতার স্থান থাকবে না, আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো হবে স্বাধীন, শক্তিশালী ও স্বচ্ছ।
বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেও কিছু রাজনৈতিক দল ধারাবাহিকভাবে সে সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বাধা দিয়ে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তারা এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করছে যা জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্যগুলোর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল, জুডিশিয়ারি, মহা-হিসাব নিরীক্ষকসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দল-মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় প্রভাব বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করছে। যে বৈষম্যমূলক নিয়োগ ও রাষ্ট্রীয় লুণ্ঠনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে সে কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার মাধ্যমে কিছু রাজনৈতিক দল স্পষ্টভাবে নতুন প্রজন্মের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সাথে উপহাস করছে। এছাড়া বিচারপতি নিয়োগে দলীয় প্রভাব কমিয়ে জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ আধুনিকায়ন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পৃথককরণ, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এটি মূলত রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান ও তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের এক গভীর ষড়যন্ত্র।
প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো কোনো ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের জন্য নয়; এগুলো দেশের, জনগণের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শর্তভিত্তিক রূপরেখা। জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রগঠনমূলক সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। আর সে গণমতের সর্বোচ্চ প্রকাশের মাধ্যম হলো গণভোট। জনগণের প্রত্যক্ষ মতামত নিয়েই সংস্কারের প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যদি কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী অথবা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে ছাত্র-জনতা সে বাধা মোকাবিলায় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করবে। কারণ জুলাই বিপ্লব কেবল শাসক পরিবর্তনের ডাক ছিল না; এটি ছিল একটি অন্যায়-ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে ন্যায়, স্বাধীনতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শপথ।
 


