নারায়ণগঞ্জে তোপের মুখে সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদের

রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে পেয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা আটকের চেষ্টা চালায়।

কামাল উদ্দিন সুমন, নারায়ণগঞ্জ

Location :

Narayanganj
তোপের মুখে সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদের
তোপের মুখে সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদের |নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জে ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েছে ফ্যাসিবাদী আমলে গুম-নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদের। তবে ঘটনাস্থল থেকে সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিরাপদে সরে যেতে সহায়তা করার বিষয়ে বিএনপির সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে পেয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা আটকের চেষ্টা চালায়।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাবেক এ ওসি ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় বিভিন্ন মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে তিনি অমানুষিক নির্যাতন চালতেন। নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন মঞ্জুর।

বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের জেলা সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর বেপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে আমাকে ও আমার মামাতো ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আমাদের থানায় নিয়ে মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে ও আমার মামাতো ভাইকে ওসি তার রুমে নিয়ে টানা এক ঘণ্টা পিটিয়েছে। তারপর তিন দিন গুম করে রাখে। সেই সময় আমার পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকাও নিয়েছিল। আজ সেই মঞ্জুর কাদেরকে ডিসি অফিসের নিচে দেখতে পাই। তখন তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার জন্য আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি দৌড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে তাকে পেলেও বিএনপিপন্থী কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।’

তার বিরুদ্ধে আইন বহির্ভূতভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেন সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমৃত্যু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এ মঞ্জুর কাদের ছিলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তাকে আমরা পুলিশে দিতে চেয়েছিলাম, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কারণে তা পারিনি।’

সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে মঞ্জুর বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন ধারণা থেকে তিনি মামলা করেননি। আগামীকাল সোমবার মামলা করবেন।

ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘জামায়াতের আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে আইন-বহির্ভূত এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে নিরাপদে চলে যান।’

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘আমরা এমন কোনো ঘটনার খবর পাইনি। আইনজীবীরা বা সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তাও আমাদের কোনো অভিযোগ জানাননি।’