নওগাঁয় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ট্রিপল মার্ডার মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হয়। মামালার আরো আটজন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। খালাস প্রদান হয় আরো চারজন আসামিকে।
আজ বুধবার দুপুরে আবু বক্কর সিদ্দিক,আমির আলী ও আব্দুর কাদিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন নওগাঁ অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ফেরদৌস ওয়াহিদ এ রায় প্রদান করেন।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পোরশা উপজেলার কালাইবাড়ি গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (পলাতক), সাজেমান আলীর ছেলে আমির আলী এবং হাসেন আলীর ছেলে আব্দুল কাদির ওরফে কাদের।
এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে নুরুল হুদা (পলাতক), ফজলুর রহমানের ছেলে আলিম ওরফে আলম, ইসমাইল হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম এবং ফজলুর রহমানের ছেলে ওয়াজেদ আলী। তাদের প্রত্যেককে পাঁচবছর সশ্রম কারাদণ্ড একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো ছয়মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও এ মামলায় আব্দুস সামাদের ছেলে তরিকুল ইসলাম, ফজলুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম, আব্দুস সামাদ ও আবুল কালামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায়ে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মোসা: মরিয়ম বিবি, কামেলা বেগম, কহিনুর বেগম ও রফিকুল ইসলাম।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট পোরশা উপজেলার কালাইবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ আম বাগানে কাজ করছিলেন। এ সময় সকাল ৭টার দিকে ২০থেকে ২৫জন তার আম বাগানে এসে অবৈধভাবে জায়গা দখলে নিতে চায় এবং কিছু আম গাছ উপড়িয়ে ফেলে। এ সময় আব্দুস সামাদের স্ত্রী, ছেলে, ভাই ও বোনেরা এগিয়ে আসলে মামলার আসামিরা তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে তিনজন এবং পরে আরো পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যার কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুস সামাদের ভাই শফিকুল ইসলাম, বোন সেলিনা এবং তার মেয়ে নার্গিস মারা যায়।
এ ঘটনায় আব্দুস সামাদ ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট পোরশা থানায় বাদি হয়ে ২৬ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এ মামলায় ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আজ এই রায় দেন বিচারক।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাব্বির আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী তাজরিন নাহার উচ্চ আদালতে রায়ের পক্ষে আপিল করবেন বলে জানান।