চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের পাঁচুড়িয়া গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন রনি। তার জয়ের খবরে জন্মস্থান বাগাতিপাড়ায় বইছে আনন্দের জোয়ার।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, শিবির-সমর্থিত প্যানেলের রনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মালঞ্চি বাজার, ফাগুয়াড়দিয়াড় বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-শিবিরের পক্ষ থেকে মিষ্টি বিতরণ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।
শিবির নেতারা বলেন, চাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে রনি এখন বাগাতিপাড়ার তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
রনির বাবা মো: এনামুল হক কৃষক এবং মা আছমা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে রনি সবার বড়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নেন পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন মুরাদপুর পাঁচুড়িয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন।
রনির খালাত ভাই জাহিদ হাসান জানান, পাশাপাশি গ্রাম তাদের। সকল আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি খোঁজ-খবর ও যোগাযোগ রাখেন রনি। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় রনি শিবিরের সাথে জড়িত হন।
তমালতলা এলাকার জামায়াত কর্মী হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৩ সালের ১২ মে ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত ঘোষিত লংমার্চে অংশ নেয়ার জন্য রাতে আব্দুলপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেন তিনি। রাজশাহী মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও নাটোর জেলার অসংখ্য নেতা-কর্মীরা ওই ট্রেনে যাচ্ছিল সেদিন। ঠিক তখনই চোখে পড়ল ১৪ থেকে ১৫ বছরের এক কিশোর, মাথায় কালিমা খচিত পতাকা বেঁধে স্লোগানে মুখর করে তুলেছে পুরো বগি। সুযোগ বুঝে একসময় নাম জানতে চাইলে সে বলেন ‘আমি বাগাতিপাড়ার রনি’। মুহূর্তেই শুরু হলো পুলিশের তল্লাশি। পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ায় সেদিন রনিকেও আটক করা হয়। পরে অনেকের অনুরোধে বয়স কম বিবেচনায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেই থেকে রনিকে চিনি।
রনির প্রাথমিক শিক্ষাজীবনের শিক্ষক আনজুম আরা খানম রিতা বলেন, ‘লেখাপড়া ও আচার ব্যবহার সবকিছু মিলে শিক্ষকদের ভালোবাসার একজন ছাত্র ছিল সে। ছোটবেলাতেই তার মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সে ক্লাস ক্যাপটেন ছিল।’
মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনের শিক্ষক আ: হান্নান শাহ বলেন, ‘সে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। তার বন্ধু ও শিক্ষকদের সাথে খুব মিল ছিল তার। ছোট থেকেই মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে তাকে।’
বাগাতিপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির আফজাল হোসেন বলেন, ‘ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় উপজেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে রনিকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। সে ছোট থেকেই দলের সাথে জড়িত। দলীয় সকল কর্মসূচিতে সে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।’
রনির বাবা এনামুল হক বলেন, ‘আমার ছেলে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি, আমার পরিবার ও এলাকাবাসী- সকলেই আনন্দিত।’
রনি সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এবং সুখে-দুখে মানুষের পাশে থাকবে এটাই তার বাবার চাওয়া। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।