রংপুরে গ্রেফতার হওয়া আ’লীগ নেতা এখন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক

মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে তাকে বহিষ্কারও করেছিল আওয়ামী লীগ। পরে ২০২৪ সালে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন স্বাধীন
কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন স্বাধীন |সংগৃহীত

রংপুরে ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজন উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদককে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি ইউনিয়নের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ রাজনৈতিক মহলে।

জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট রংপুর সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী তওহীদ হোসেন সাদ্দাম ও ১ নম্বর প্রথম যুগ্ম সন্বয়কারী আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে ৪ নম্বর সদ্য পুষ্করনী ইউনিয়ন এনসিপির ১৫ সদস্যের সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় কৃষ্ণ রঞ্জণ বর্মন স্বাধীনকে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাগোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন স্বাধীন আওয়ামী লীগের রংপুর সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সদ্য পুষ্করনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছিল আওয়ামী লীগ। পরে ২০২৪ সালে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

থানা সূত্র জানায়, গত বছর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে দমন করতে অস্ত্র ও অর্থজোগান দেয়া ছাড়াও সরাসরি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। রংপুর মহানগরীর তাজহাট ও কোতয়ালী থানায় ৫ আগস্টে পর করা হত্যা ও হত্যাচেষ্টার তিনটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি।

এছাড়াও গত বছর সরকার উপজেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়ার পরপরই ইয়াবাসহ যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তিনি। মাদক কারবার ও সেবন সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে সদর কোতয়ালী থানায়।

রংপুর সদর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, ‘সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণ রঞ্জণ বর্মন স্বাধীনকে ইয়াবা কেনাবেচার সময় ইয়াবাসহ আটক করে যৌথ বাহিনী সদর থানায় সোপর্দ করে। তার নামে মাদক সেবন ও ব্যবসার মামলা আছে এই থানায়।’

এসব তথ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এনসিপির তীব্র সমালোচনা করে অনেকেই মন্তব্য করছেন। একজন তার মন্তব্যে লিখেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করা একটা নতুন দল এনসিপি যদি জুলাই বিপ্লবে হামলাকারী চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতাকে তাদের দলে আশ্রয় দেয় টাকার বিনিময়ে তাহলে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের কি হবে? এই দলটির কী হবে?‘

আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীনকে এনসিপির নেতা করার বিষয়ে সদর উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী তওহিদ হোসেন সাদ্দাম বলেন, ‘২০২০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর আর আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো চক্রান্তমূলক।‘

এ ব্যাপারে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) ও রংপুর জেলা প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ আল গালিব গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘কৃষ্ণ রঞ্জণ বর্মন স্বাধীনের বিরুদ্ধে জুলাই বিরোধিতার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। আগে আওয়ামী লীগ করতেন, এখন বহিষ্কৃত। এরপরও যদি তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ইয়াবাসহ গ্রেফতারের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি। বলেন, ‘খোঁজ নেয়া হচ্ছে।‘

এ ব্যাপারে কৃষ্ণ রঞ্জণ বর্মন স্বাধীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।