৭ দিনেও চালু হয়নি বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র, লোডশেডিংয়ের কবলে ৮ জেলা

প্রথম ইউনিটটি চালু করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু তৃতীয় ইউনিট চালু করতে আরো বেশি সময় লাগবে।

সাদাকাত আলী খান, দিনাজপুর

Location :

Dinajpur
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র |সংগৃহীত

সাত দিনেও চালু করা যায়নি দিনাজপুর পার্বতীপুরের কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের আট জেলা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। যা থেকে সর্বশেষ উৎপাদন হচ্ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাকি ইউনিটগুলো চালু হতে আরো সময় লাগবে।

গত রোববার রাত সাড়ে ৮টায় যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এবং এর আগে ১৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তৃতীয় ইউনিটে গর্ভনর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়। এসব কারণে কেন্দ্রটির ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের সংস্কার কাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলমান। ফলে তখন থেকে এ ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র জানায়, কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর সম্ভাব্য সময় জানালেও কবে নাগাদ চালু হতে পারে কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট তা এখনো নির্দিষ্ট করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ ইউনিট বন্ধের ১০ দিন পার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধের ৫ বছর হয়ে গেলেও সেটি চালুর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ, প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করে চালু করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল এখন একটি ইউনিট (দ্বিতীয় ইউনিট) মেরামত করতেই তার চেয়ে বেশি অর্থ চাচ্ছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ২০০৬ সালে পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া এলাকায় কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। প্রথমে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট ছিল। যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২৫ মেগাওয়াট করে। ২০১৭ সালে ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি ইউনিট চালু করা হয়। ফলে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ৫২৫ মেগাওয়াটে। ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র বলা হলেও কখনো ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে অধিকাংশ সময় কোনো না কোনো ইউনিট বন্ধ রাখা হতো।

পরে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এখনো সেটি চালু করা যায়নি। বাকি দুটি ইউনিটের মধ্যে কখনো প্রথমটি আবার কখনো তৃতীয়টি বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় ও ১৯ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিট। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে প্রথমটি থেকে ৫০-৫৫ মেগাওয়াট এবং তৃতীয়টি থেকে ১৬০-১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো। পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভোল্টেজ ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলে চাহিদা পূরণে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষজন। জাতীয় গ্রিড থেকেও মিলছে না চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ।

এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রথম ইউনিটটি চালু করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এটি চালু করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু তৃতীয় ইউনিট চালু করতে আরো বেশি সময় লাগবে। কারণ তৃতীয়টি চালু করতে অনেক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। অন্যথায় মেশিন ভেঙে যাবে। আমরা কেন্দ্র প্রস্তুতকারী চীনা প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনালের সাথে যোগাযোগ করেছি। ইউনিটটি এখনো গরম আছে, সেটি ঠান্ডা হলে তারা এসে মেরামত শুরু করবেন।’