বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বসছে বাঁশের হাট, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

সপ্তাহে শুধু সোমবারে হাট বসার কথা থাকলেও রোববার সকাল থেকেই দূরদূরান্ত থেকে বাঁশ নিয়ে আসতে শুরু করেন বিক্রেতারা। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও খেলাধুলার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মুহাম্মদুল্লাহ, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

Location :

Tangail
বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বসছে বাঁশের হাট
বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বসছে বাঁশের হাট |নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইল সখীপুরের কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ২০ বছর ধরে বসছে বাঁশের হাট। সপ্তাহে শুধু সোমবারে হাট বসার কথা থাকলেও রোববার সকাল থেকেই দূরদূরান্ত থেকে বাঁশ নিয়ে আসতে শুরু করেন বিক্রেতারা। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও খেলাধুলার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১১০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রথমদিকে সীমিত পরিসরে বাঁশ কেনা-বেচা হলেও এখন তা বিশাল আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে হাজার হাজার বাঁশের স্তূপ জমে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়েই ব্যবসায়ীরা বাঁশ আনা-নেয়া করছেন। ওই একই ফটক দিয়েই শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। হাট চলাকালীন রোববার ও সোমবার—দু’দিন মাঠ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। এদিকে বাঁশ এতটাই জায়গা দখল করে যে, শ্রেণিকক্ষের সামনেও রাখা হয় বিক্রির উদ্দেশে। হাট শেষে মাঠ খেলার উপযোগী থাকে না একইসাথে পড়ে থাকে বাঁশের কঞ্চি, ধারালো ফলা ও টুকরো। ফলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও শিক্ষার্থীরা থাকে ঝুঁকির মুখে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জানায়, ‘মাঠে বাঁশ রাখার কারণে তারা ফুটবল খেলতে পারে না।’

সহপাঠী আরাফাতের অভিযোগ, ‘একদিন বাঁশে ধাক্কা লেগে সে আহত হয়েছিল। ভয়ে ওই মাঠে আর খেলা করতে যায় না সে।’

অভিভাবক আবদুল করিম বলেন, ‘মাঠে বাঁশ রাখার কারণে বাচ্চাদের খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। মাঠটা রক্ষা করা জরুরি, যাতে বিদ্যালয় ও এলাকার শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে।’

হাটের ইজারাদার নব্বেস আলী দাবি করেন, ‘জমিটি বিদ্যালয়ের নয়, এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন।’

জমির মালিকানা দাবি করা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষ্য, ‘তার নানা বিদ্যালয়ের জন্য কিছু জমি দান করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের সামনের বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তিমালিকানা হওয়ায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে যোগদানের আগেই মাঠে হাট বসত। অনেকবার নিষেধ করলেও তারা শোনে না। শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। বিদ্যালয়ের জমি চিহ্নিত না থাকায় সমস্যা আরো বেড়েছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আবেদন করেছেন। ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে মাঠে যাতে হাট না বসে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনে হাট বন্ধ করা হবে।’