মেঘনার পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন: হুমকিতে বাঁধ, আতঙ্কে স্থানীয়রা

প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো ফল পাইনি। মনে হয়, বালু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসনও জিম্মি। সরকার পরিবতর্ন হলেও কোনো কাম হচ্ছে না।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Chandpur
ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে কয়েকজন
ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে কয়েকজন |সংগৃহীত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ফলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

এই বাঁধের মধ্যে মতলব দক্ষিণের একটি গ্রাম ও মতলব উত্তরের ১৪টি ইউনিয়ন অবস্থিত। সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ। গত কয়েকদিন উপজেলার মেঘনা নদী অববাহিকার দশানি, ষাটনল, নাছিরাকান্দি, বোরচর এলাকা ঘুরে প্রকাশ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সন্ত্রাসী কিবরিয়া মিয়াজি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাদের এই ধরনের কাজে জড়িত থাকায় দু’পক্ষের বিরোধে গোলাগুলিতে একাধিক ব্যাক্তি মারা গেছে, আহত হয়েছে আরো অনেকে। এসব ঘটনায় এখনো মামলা চলছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতকিছুর পরও কিভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে?

দশানি গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, ‘কী বলমু ভাই, দিন-রাইত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলে। পাড় ধসে আমাদের ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ যদি ভেঙে যায়, তাহলে পুরো মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ শেষ হয়ে যাবে, অথচ কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো ফল পাইনি। মনে হয়, বালু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসনও জিম্মি। সরকার পরিবতর্ন হলেও কোনো কাম হচ্ছে না।’

‘মাটি ও মানুষ’ নামে মতলব উত্তরের পরিবেশবাদী সংগঠনের পরিচালক শামীম খান বলেন, ‘বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। এটি কেবল নদীভাঙন বাড়াচ্ছে না, বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

উপজেলার মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যতদূর জানি, মূলত বালু উত্তোলনের জন্য মুন্সীগঞ্জ এলাকায় প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে তারা বালু উত্তোলন করে। তবে নৌ-পুলিশ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে।’

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘মতলব উত্তরের সীমানায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করছি।’

এই বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা অচিরেই যৌথ বাহিনীর একটি অভিযান পরিচালনা করব। কাউকে ছাড় দিবো না।’

ডিসি আরো বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কেউ পার পাবে না। এতে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে লাখো মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সূত্র : ইউএনবি