হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরে টানা তিন দিন ১৪৪ ধারা জারি থাকার পর বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) নিষেধাঙ্গা তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে, শহরে সাধারণ জনতার মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দোকানপাট ধীরে ধীরে খুলেছে। শহরস্থ বিভিন্ন স্টেশনে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সকাল থেকেই শহরে যৌথবাহিনীর টহল জোরদার লক্ষণীয়।
এদিকে, এ মারামারির ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত মামলা না করলেও আট সাংবাদিকসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ হাজার অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নবীগঞ্জ থানার এসআই রিপন চন্দ্র।
নবীগঞ্জ এইচএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত কেন্দ্রেই যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল পরীক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত ছিল। এর আগেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। বলা হয়, কোনো ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেকোনো সহযোগিতার জন্য সরাসরি যোগাযোগ করতেও বলা হয়। তাই পরীক্ষার্থীরা যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
সকালেই ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেন। অটোরিকশা, সিএনজি, রিকশা ও ব্যাটারিচালিত টমটসহ নানা ধরনের ছোট পরিবহনের চলাচলে আবারো প্রাণচাঞ্চল্যা ফিরে এসেছে শহরে।
এদিকে, পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় সব আসামির বিরুদ্ধে লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- ব্যবসায়ীদের বর্ণনা মতে অগ্নিকাণ্ড, ভাংচুর ও লুটপাটে ৪ কোটি ৪ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো আসামিকে দোষারূপ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় ওসি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ এসল্ট হওয়ার ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে পাঁচ হাজার অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামি ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একে অপরের বিরুদ্ধে লেখালেখি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আশাহিদ আলীকে গত ৪ জুলাই নবীগঞ্জে অপর গণমাধ্যমকর্মী সেলিম তালুকদার ও তার লোকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় আনমনু গ্রামের লোকজন হামলাকারীদের মধ্যে দুই যুবককে আটক করে পুলিশে দেন। এতে তিমিরপুর গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তাদের লোকজনকে আনমনু গ্রামের লোকজন ধরে পুলিশে দেয়ায় এ নিয়ে ওই দুই গ্রামের লোকজন মারামারি করেন।
এ মারামারি সূত্র ধরে গত সোমবার দুপুরে ঘোষণা দিয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন নিজ নিজ এলাকায়। একপর্যায়ে বিকেলে উপজেলা সদরে ওই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল, বল্লম, ধারালো অস্ত্রসহ নানা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেন। সংঘর্ষকালে ফারুক মিয়া নামে তিমিরপুর গ্রামের একজন নিহত ও উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক লোক আহত হন। ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি দোকানপাট। এতে পুরো পৌর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।