রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের নাম তাওসিফ রহমান সুমন (১৮)। এ ঘটনায় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার গুরুতর আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর ডাবতলা এলাকার ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করেছে। তাকেও আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত তাওসিফ রহমান সুমন রাজশাহী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুর রহমানের ছেলে।
একটি সূত্র জানায়, বিচারক আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। পরিবার নিয়ে নগরীর ডাবতলা এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। নিহত তাওসিফ রহমান নবম শ্রেণিতে পড়ত।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, গুরুতর আহতাবস্থায় তাসমিন নাহারকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে আহতাবস্থায় এক দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে। তাকেও রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, হামলাকারী হিসেবে আটক ব্যক্তির নাম ইমন। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। বিচারক আবদুর রহমান সিলেটে কর্মরত থাকাকালে সিলেটের জালালাবাদ থানায় ইমনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। পরে রামেক হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তার সাথে পূর্ববিরোধও থাকতে পারে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি আহত হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আর হামলকারী যুবক ও বিচারকের স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে, সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হামলাকারী ইমন জজ সাহেবের স্ত্রীর পূর্বপরিচিত। তাই দারোয়ানকে ভাই পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে। পরে কোনো এক বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে অভিযুক্ত আক্রমণ করে।
গাজিউর রহমান বলেন, বাঁচার লক্ষ্যে তারাও আক্রমণ করে। এসময় জজ সাহেবের ছেলে গুরুতর আহত হয়। পরে সে মারা যায়। জজ সাহেবের স্ত্রী ও হামলাকারী উভয়ে আহত। তারা দুজনই অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে। তাদের সেন্স ফিরে এলে আমরা আরো জানতে পারব। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এগুলো বিশ্লেষণ করা হবে। এছাড়া সিসিটিভি ফুজেট আছে। এগুলো বিশ্লেষণ করলে ঘটনা সম্পর্কে পুরো তথ্য পাওয়া যাবে। সম্ভবত হামলাকারীর বাসা গাইবান্ধায়।
তিনি আরো বলেন, চাকু জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, একটা জিডি করা ছিল থানায়। সেই লোকটা গরিব ছিল। জজ সাহেবের স্ত্রীর সাথে তার কোনোভাবে পরিচয় হয়। সিম্প্যাথির দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে অর্থনৈতিকভাবে হেল্প করত। এই সূত্রেই তার সাথে পরিচয়। পরে আরো টাকা-পয়সা চাচ্ছিল, আর টাকা-পয়সা হয়তো দিচ্ছিল না— এরকম একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে জিডি করা। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ওই ঘটনার সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে ভিকটিম ও হামলাকারী জীবিত আছে। তারা অজ্ঞান অবস্থায় আছে। তাদের সেন্স ফিরলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
আরএমপির এ মুখপাত্র বলেন, ঘটনাস্থলে চারজন ছিল। জজ সাহেবের স্ত্রী ও ছেলে, কাজের বুয়া ও হামলাকারী। জজ সাহেবের ছেলে মারা গেছে, হামলাকারী ও জজ সাহেবের স্ত্রী অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কাজের বুয়ার সাথে কথা বলতে পারিনি। তার সাথে কথা হলে হয়তো আরো কিছু জানতে পারবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার সময় বাসাটিতে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন মেসের আলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুর আড়াইটার দিকে এসেছিল ছেলেটা। তাকে চিনতাম না। সে ভাই পরিচয়ে বাসায় ঢুকে। খাতায় এন্ট্রি করে নিছি, সব লেখা আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি তো গেটে দাঁড়িয়ে আছি, ভেতরে কী হয়েছে জানি না। পরে লোকজন যেতে দেখেছি।’



