টানা বৃষ্টিতে ক্ষতি, দুশ্চিন্তায় রাজশাহীর পানচাষিরা

‘৫ বছরের পুরোনো দেড় বিঘার বরজই ছিল সংসারের প্রধান ভরসা। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হতো। এখন লোকসানও গুণতে হচ্ছে।’

দুর্গাপুর (রাজশাহী) সংবাদদাতা

Location :

Rajshahi
বাজারে পানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা
বাজারে পানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা |নয়া দিগন্ত

রাজশাহীর দুর্গাপুরে মিষ্টি পানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রসিদ্ধ। এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে পান চাষের সাথে জড়িত। পান বিক্রির আয় দিয়েই চলে অধিকাংশ মানুষের সংসার। তবে গত একমাস ধরে পানের বাজারে ধস নামায় ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছেন পানচাষীরা।

চাষিদের অভিযোগ, এবার বছরের শুরুর দিকে শিলাবৃষ্টির কারণে পানের বরজে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপর মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও রোগবালাইয়ের প্রভাব থাকলেও ফলন হয়েছে ভালো। কিন্তু বাজারে দাম নেই। আগে যে মোটা ও বড় আকৃতির পান বিড়া প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। মাঝারি ও চিকন পানের ক্ষেত্রে দাম পড়েছে মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকা, যেখানে আগে তা বিক্রি হতো ১০ থেকে ২০ টাকায়।

দুর্গাপুর উপজেলায় উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয় এবং রফতানিও হয়ে থাকে। দুর্গাপুর বাজারসহ শ্যামপুর, আলীপুর, গোপালপুর, নারায়নপুর, দাওকান্দি, কালীগঞ্জ ও পানানগর আড়তে সপ্তাহে ছয় দিনই কেনা-বেচা হয়। আড়তগুলোতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকার পানের লেনদেন হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

উপজেলার নান্দিগ্রামের পানচাষী আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘৫ বছরের পুরোনো দেড় বিঘার বরজই ছিল সংসারের প্রধান ভরসা। প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হতো। এখন লোকসানও গুণতে হচ্ছে।’

নওপাড়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘বর্ষার শুরুতেই ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি সুদে। এখন পান বিক্রি করছি কম দামে, কারণ কিস্তি দিতে হবে। এনজিও আর ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে কিছুই হাতে থাকছে না।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘দুর্গাপুরে ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষাকালে পানের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমে যায়, তবে শীত মৌসুমে চড়া দাম থাকে, তখন লোকসান কিছুটা পুষিয়ে যায়।’

দুর্গাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, ‘পান দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় দাম ওঠানামা করে। বর্ষাকালে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকে, তাই দাম পড়ে যায়। তবে পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’

পানচাষিদের দাবি, ‘বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকতে পারে। তারা বলেন ‘পণ্যের দাম বাড়ছে, অথচ পানের দাম কেন কমছে? বর্তমানে উপজেলায় পান চাষের সাথে জড়িত পরিবারগুলো ঋণের ফাঁদে পড়ছে, আর্থিক সঙ্কটে নাকাল হয়ে পড়েছে চাষিরা।’