নিজ ঘর থেকে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলছে রংপুরে। ঘটনার পর ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করছেন তার শ্বশুর।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর বালাপাড়া এলাকা থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মিতু বেগম (২১) নামের ওই গৃহবধূ ওই এলাকার সাহানুর রহমান সোহানের স্ত্রী। তার একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান জানান, স্থানীয়দের কাছে থেকে পেয়ে সন্ধ্যায় নগরীর বালাপাড়ায় সাহানুর রহমান সোহান মিয়ার বাড়ির নিজঘর থেকে তার স্ত্রী মিতু বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃত করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ‘সকাল ১১টায় পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকির পর সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পান মিতু বেগমকে। পরে ওড়না কেটে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু পুলিশকে খবর দেয়া হয় বিকেলে। সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে আমরা ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠাই।’
এদিকে, মিতু বেগমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ভাইসহ বাবার বাড়ির লোকজন ছুটে এসে ঘটনাটিতে হত্যা দাবি করলে সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত স্বামী সোহানুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সোহানুরকে ছিনিয়ে নেয় স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, মিতুর ভাইসহ পরিবারের লোকজনকে সোহানের লোকজন মারপিট করে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোহানের পরিবার বাড়ি তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এলাকাবাসী সেখানে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দিচ্ছেন।
অপরদিকে, ওই গৃবধূর লাশ উদ্ধারের পরপরই একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সবার ফোনে ফোনে। এতে দেখা যায়, মিতু বেগমের শ্বশুর কসাই রাজা মিয়া পুত্রবধূ মিতু বেগমকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করছেন।
মিতু বেগমের মামা শফি আলম জানান, ‘তিন বছর আগে বিয়ে হয় মিতুর। বিয়ের পরই স্পষ্ট হয় স্বামী সোহান নেশাখোর। এ নিয়ে আমার ভাগ্নি কয়েকবার বাড়িতে গিয়ে আর আসতে চায়নি। খবর শুনে আমি এসে দেখি আমার ভাগ্নির লাশ বারান্দায়। সেখানে এসে কানাঘুষা ও একটা ভিডিও দেখি। শুনতে পাই মিতু বেগমকে শ্বশুর রাজা মিয়া অবৈধ মেলামেশায় বাধ্য করে আসছিল। মঙ্গলবারও সকালে একই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে মিতু কৌশলে তা ভিডিও করে। ভিডিওটি ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছিল মিতু। সে কারণেই তাকে হত্যা করে লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে জামাই ও শ্বশুর।’
তবে ওসি আতাউর রহমান জানান, ‘ভিডিওটিকে ক্লু হিসেবে ধরে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের পরই স্পষ্ট হবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা।’ এ ঘটনায় তার পরিবারের হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।