মুহুরী কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে

ফেনীর আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারো মানুষ

ভারত সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যার পানি ক্রমেই ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার নিচু এলাকার দিকে গড়াচ্ছে।

শাহাদাত হোসাইন, ফেনী অফিস

Location :

Feni
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা |নয়া দিগন্ত

ফেনীতে টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বুধবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং উজান থেকে পানির চাপ কিছুটা কমায় নদনদীতে পানি আগের তুলনায় কমেছে। এতে করে ভারত সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যার পানি ক্রমেই ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার নিচু এলাকার দিকে গড়াচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে জানান, মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নদীর পানি বিপৎসীমার অন্তত দুই মিটারের নিচে ছিল। পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানি ক্রমান্বয়ে ফুলগাজি হয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের দিকে গড়াচ্ছে। এতে করে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।’

বৃষ্টিপাত বন্ধ ও ভারতের পানি না আসলে দুই-তিন দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জানান, বন্যার পানি নেমে গেলে বাঁধের ভাঙ্গনগুলো মেরামত করা হবে।

এদিকে, বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, রেড ক্রিসেন্ট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কাজ করছে।

সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার আলোকে সর্বোচ্চ সহায়তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার সেনাক্যাম্পগুলোতে ইতোমধ্যে ট্রাইশার্ক বোট, ওবিএম ইঞ্জিন এবং লাইফ জ্যাকেট মোতায়েন করা হয়েছে, যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সেনাবাহিনীর একটি চিকিৎসক দল জেলা সিভিল সার্জনের সাথে সমন্বয় সভা করেছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘বন্যার্তদের উদ্ধারে ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ অনেকেই কাজ করছেন। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০টি কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।’

পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, বৃহস্পতিবার তিনি ফুলগাজী ও পরশুরামের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি নৌকা আনা হয়েছে, যা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা বন্যার্তদের উদ্ধার কাজ করছেন। এছাড়া বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বাড়ি-ঘরে অবস্থানরতদের রান্নাকরা খাবার ও শুকনা খাবার পুলিশ সদস্যরা পৌঁছে দিচ্ছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মজিবুর রহমান জানান, জেলায় বৃষ্টিপাত অনেক কমে গেছে। বুধবার রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮.৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ছিল দেশের মধ্যে সর্বাধিক।