ফরিদপুরের অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেকের দাফন সম্পন্ন

‘মোসাদ্দেক বশির কখনো মামলার ফি চেয়ে নিতেন না। ভুক্তভোগী যা দিতেন তাই খুশি মনে গ্রহণ করতেন। আর যা আয় করতেন তাও অকাতরে খরচ করতেন গরীবদের জন্য। তিনি বেশিরভাগ সময় মামলা না করে উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। যার কারণে অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমান সময়ে তার মতো মানুষ খুব বিরল।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Faridpur
অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের জানাজার দৃশ্য। ইনসেটে অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক বশির
অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের জানাজার দৃশ্য। ইনসেটে অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক বশির |ছবি : নয়া দিগন্ত

ফরিদপুর জেলার এজিপি ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার দুই দফা জানাজা শেষে শহরের আলীপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে। ফরিদপুর বারের আইনজীবীরা ছাড়াও মোসাদ্দেকের বন্ধু-বান্ধব, দলীয় নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফরিদপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ কয়েকজন। তারা মোসাদ্দেক বশিরের জন্য উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান।

মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মমিনখার হাট বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন মাধবদীয়া ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।

এর আগে রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের কাছে বদরপুর (মন্ত্রীর বাড়ির কাছে) এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মোসাদ্দেক বশির। তার মৃত্যুতে পুরো ফরিদপুরে নেমে আসে শোকের ছায়া।

জানা গেছে, মোসাদ্দেক বশির জামায়াতে ইসলামীর ফরিদপুর পৌরশাখার যুব বিভাগের সভাপতি ছিলেন। কানাইপুর গিয়েছিলেন জামায়াতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মোটর সাইকেলে ফেরার পথে একটি কাভার্ড ভ্যান তাকে পেছন থেকে মাথার ডানপাশে আঘাত করে। সাথে সাথে তিনিসহ মোটরসাইকেল চালক রাস্তায় ছিটকে পরেন। এ সময় বশিরের নাক, কান ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। পরে পেছনে থাকা অটো চালক তাদেরকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার বশিরকে মৃত ঘোষণা করেন।

মোসাদ্দেক বশিরের সাথে থাকা আইনজীবী মজিবর বলেন, আমরা রাস্তার বামপাশেই ছিলাম। একটি কাভার্ডভ্যান হঠাৎই আমাদের ওভারেটক করার সময় পেছনের দিক থেকে আঘাত করলে আমরা বামদিকে পড়ে যাই। আমি পড়ে গিয়ে হাতে-পায়ে আঘাত পেলেও বশির স্যার মাথায় আঘাত পান। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মোসাদ্দেক বশির। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। পরে ফরিদপুরে আইন পেশায় যুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি আইন কর্মকর্তা (এজিপি) হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। বাবা–মা, ভাই–বোন ছাড়াও স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে ৬ বছর। মেজো মেয়ের ২ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৬ মাস।

জানাজায় অংশ নেয়া হাজারো মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন বশিরের লাশ দেখে। সবাই তাকে ভালো মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন। কয়েকজন আইনজীবী জানান, মোসাদ্দেক বশির কখনো মামলার ফি চেয়ে নিতেন না। ভুক্তভোগী যা দিতেন তাই খুশি মনে গ্রহণ করতেন। আর যা আয় করতেন তাও অকাতরে খরচ করতেন গরীবদের জন্য। তিনি বেশিরভাগ সময় মামলা না করে উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। যার কারণে অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমান সময়ে তার মতো মানুষ খুব বিরল।