আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলেও শরীয়তপুর-বরিশালের সীমান্তবর্তী এলাকা কুচাইপট্টিতে থামেনি আওয়ামী সন্ত্রাসী একটি বাহিনীর তাণ্ডব। এখনো তারা চালিয়ে যাচ্ছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ওই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বাড়ি-ঘরে হামলা ভাংচুর, সামাজিক অনুষ্ঠান পণ্ড ও নারীদের যৌন হয়রানী। তাদের অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়ে বিচার চাইতে গিয়েও কুপ্রস্তাব পেতে হয়েছে অনেক নারীকে। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় অনেক নারী এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।
এমন অভিযোগ এনে আওয়ামী সন্ত্রাসী ওই বাহিনীর বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শরীয়তপুর ও বরিশালের সীমান্তবর্তী গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের কোলচোরি পাতারচর এলাকার গ্রামবাসী।
রোববার (২৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ ফ্রন্টডেক্স জমা দেয় মানববন্ধনকারীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানায়, ‘শরীয়তপুর ও বরিশাল জেলার সীমান্ত এলাকায় কোলচোরি পাতারচর গ্রাম। সেই গ্রামে নির্যাতন ও জুলুম করে আসছে স্বেচ্ছাসেককলীগ নেতা সোহেল বেপারী, তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম বেপারী, মিজান বেপারী ও শামীম বেপারীরা। তারা এখনো নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে, এছাড়াও তারা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন করে থাকে। অবৈধ বালু উত্তোলনসহ তাদের এই অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ স্থানীয়দের মারধরের শিকার হতে হয়। তাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে বসতভিটা বিক্রি করে ঢাকা চলে গেছেন অনেকে।
আওয়ামী সন্ত্রাসী ওই বাহিনীর বিচার দাবিতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে আসেন ওই এলকার শতাধিক নারী-পুরুষ।
ভুক্তভোগী রিনা বেগম, খালেদা বেগম ও জুলেখা বলেন, ‘এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের একটি চক্র রয়েছে। তারা গ্রামবাসীদের নানাভাবে অত্যাচার করে। নারীদেরকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে। বিয়েবাড়িতে তাদের দাওয়াত না দিলে অনুষ্ঠান করতে দেয় না। সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সমাজপতিদের কাছে নালিশ নিয়ে গেলে বিচার না করে আমাদেরকে উল্টো কুপ্রস্তাব দেয়। তাদের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে না পেরে বাড়ি-ঘর বিক্রি করে অনেকেই ঢাকায় চলে গেছে। আমরা এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছি।’
ওই গ্রামের ছাত্তার মাতুব্বরের ছেলে মহিউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা বিগত সরকারের ১৬ বছর শাসনামলে চুরি-ডাকাতি, মাদক বিক্রি, নারী নির্যাতন করতো। এখনো তারা দাপটের সাথে সেই অন্যায়-অত্যাচর চালিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে যোগ করেছে নদী থেকে বালু উত্তোলন। এই বালু উত্তোলনের কারণে কোলচুরি পাতারচর গ্রাম ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে।’
মুক্তিযোদ্ধা মালেক মুন্সি জানায়, ‘তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। চাঁদা দিতে না পারায় তার গোয়াল থেকে গরু নিয়ে গেছে ওই সন্ত্রাসীরা।’
নদী ভাঙ্গনকবলিত ইসমাইল বেপারী বলেন, নদীতে তার বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি কোলচোরি পাতারচর গ্রামে জমি ক্রয় করে বাড়ি করেন। পরে সেখানে সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি বিক্রি করে দেন। এই সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার চোখ-মুখ বেঁধে বিলে নিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে স্ব-পরিবারে ঢাকায় চলে যান।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাকসুদ আলম বলেন, ‘নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও অবৈধ বালু উত্তোলনের এই জাতীয় কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। শরীয়তপুরে ওই এলাকার নারী-পুরুষরা মিলে মানববন্ধন করেছে শুনেছি। আগামীকাল ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’