সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত চার দিনের অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করাতে মানুষজন দুর্ভোগে পড়ছে।
সোনাদিয়া ইউনিয়নের জেলেপল্লীর বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, আমরা বারবার দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। এলাকায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধই আমাদের দুর্ভোগ দূর করতে পারে।
সোনাদিয়া ইউনিয়নের একজন সমাজসেবক ও চরচেঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান বলেন, উপকূলে বসবাসরত মানুষের আত্মসামাজিক উন্নয়নে মানবিক সহানুভূতি বা বার্ষিক বরাদ্দ নয় দরকার একটি টেকসই বেড়িবাঁধ।
হাতিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারে গত চারদিনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো জানা গেছে, নিঝুমদ্বীপে তাদের কর্মকাণ্ডের আওতার বাইরে। কিন্তু ইউনিয়ন হিসেবে নিঝুম দ্বীপে বসবাসরত বাসিন্দারা বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়তই অস্বাভাবিক জোয়ারে ডুবে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্বীপটির বিস্তীর্ণ এলাকা নিমজ্জিত হয়। এখানে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে দুর্ভোগে পড়তে হয় সরকারি এজেন্সিগুলোকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাতিয়ায় বেড়িবাঁধের বাইরেও হাজার হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। নদী ভাঙনকবলিত সুখচর ইউনিয়নের ২, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডগুলো এবং সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা ৪ নম্বর ওয়ার্ড, চরঈশ্বর ইউনিয়ন ও হরণী ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাহিরে জনবসতিপূর্ণ এলাকা সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এবারও এসব এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বসতঘর, রান্নাঘর, রাস্তাঘাট ও মাছের প্রজেক্ট। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর সমান পানি এখনো জমে আছে।
নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়া গ্রামের বাসিন্দা খবির উদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে লবণাক্ত পানি ঢুকে কৃষি জমি ও মাছের প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে নদীর পাড়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত জিও ব্যাগ ফেলার কাজ অদৃশ্য কারণে বন্ধ রয়েছে। দ্রুততম সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পুরো এলাকা হুমকির মুখে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়া, আল-আমিন গ্রাম, সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড, চরঈশ্বর ও হরণী-চানন্দী ইউনিয়নের প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরোজমিন পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, হাতিয়ার বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পানিবন্দি এলাকায় মানুষের মাঝে দ্রুততম সময়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।