যৌতুক মামলায় রামগড়ের আ’লীগ নেতা গ্রেফতার, মেলেছে ভয়ঙ্কর তথ্য

তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, নির্যাতন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরো একাধিক মামলা রয়েছে। এদিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চালানো ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

Location :

Khagrachari
পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রিপন
পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রিপন |নয়া দিগন্ত

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ও রামগড় সংবাদদাতা

খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহজাহান রিপনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, নির্যাতন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরো একাধিক মামলা রয়েছে। এদিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চালানো ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার সোনাইপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

রামগড় থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মঈনউদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শাহজাহান রিপন একটি যৌতুক মামলায় ১ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। মামলাটি তার স্ত্রী করেছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রামগড় থানায় আরো তিনটি মামলা চলমান রয়েছে।

আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রোববার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো হলো-

ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্যাতন ও ভয়ভীতি

সাবেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কাজী রিপনের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী, বিরোধী দলীয় কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে নিজের ছোট ভাইকে গুলি করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন তিনি।

এছাড়া মেয়র থাকাকালীন সময়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী টিটন দাশকে বিলে সাক্ষর না করায় নিজ দফতরেই মারধর করেন রিপন ও তার অনুগত বাহিনী। এনিয়ে প্রশাসনের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

‘রুম পার্টি’- রামগড়ের গোপন টর্চার সেল

তার বাহিনীর ভেতরে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল ‘রুম পার্টি’। পৌর শহরের উপকণ্ঠে একটি পুরনো কাজীর স’ মিলের ভেতরে এ নির্যাতন কক্ষের অবস্থান ছিল। বাহ্যিকভাবে এটি ছিল কাঠের গুদামঘর। কিন্তু ভেতরে চলতো মধ্যযুগীয় কায়দায় বিচার ও শাস্তি। দলীয় কর্মী, বিরোধীদলের কেউ অথবা কোনো ব্যবসায়ী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে তাকেই নিয়ে যাওয়া হতো এ ‘রুম পার্টিতে। সেখানে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ ‘রুম পার্টি’র অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মী। তবে কেউই নাম প্রকাশে রাজি হননি। তাদের ভয় যেন কাটেনি এখনো!

সরকারি জমি নিয়ে জালিয়াতি

রামগড় স্থলবন্দরের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণের অধিগৃহীত ভূমি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় সরকার বাদি হয়ে মামলা করে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি জাল কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

দলে বিভ্রান্তি ও কর্মীদের নির্বাসন

দলীয় পদে থাকার সময় নিজ দলের ভেতরেই সন্ত্রাস, ভয়ভীতি ও নিপীড়নের রাজনীতি চালিয়েছেন কাজী রিপন। তার ভয়ে অনেক নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নিজেই দলকে দুর্বল করে তোলেন বলে অভিযোগ করেন কর্মীরা।