কাদা ও ভাঙা সাঁকো পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় খাজুরার শিক্ষার্থীদের

প্রতিদিনই কাদা মাড়িয়ে, ভিজে জামা-কাপড় নিয়ে, কষ্টে হেঁটে স্কুলে আসতে হয় তাদের। অনেক সময় হাঁটু-সমান কাদা পেরিয়ে যেতে হয়।

মিজানুর রহমান, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

Location :

Patuakhali
হাঁটু-সমান কাদা পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
হাঁটু-সমান কাদা পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা |নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের ৭৮ নম্বর খাজুরা সরকারি (পাইলট) প্রাথমিক বিদ্যালয় বছরের পর বছর অবহেলায় পড়ে আছে। কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই বিদ্যালয় ও আশপাশে। ফলে প্রতিদিনই ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়টি কলাপাড়া উপজেলায় একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো পাকা রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তায় শিক্ষার্থীদের হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

প্রতিদিনই কাদা মাড়িয়ে, ভিজে জামা-কাপড় নিয়ে, কষ্টে হেঁটে স্কুলে আসতে হয় তাদের। অনেক সময় হাঁটু-সমান কাদা পেরিয়ে যেতে হয়। এতে বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বৃষ্টির দিনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিদ্যালয়ের পাশের দু’টি ভাঙা কাঠের সাঁকো। ছোট ছোট শিশুরা প্রতিদিন জীবনবাজি রেখে এসব সাঁকো পার হয়। এক হাতে স্কুলব্যাগ, অন্য হাতে ভেজা জামা সামলে তারা টলমল পায়ে এগোয়। সামান্য অসাবধানতায় অনেকেই নিচে পড়ে যায়। প্রায়ই দুর্ঘটনায় কেউ হাত-পা ভাঙে, কেউ গুরুতর আহত হয়। বই-খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ায় শিক্ষার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।

বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রায় সাত থেকে আট কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো মংথেপাড়া খালেক ভিডিবির বাড়ি থেকে আলম শিকদারের বাড়ি হয়ে খাজুরা স্কুল হয়ে জলিল মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, লেবুর বন ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়ি থেকে কবিরের দোকান হয়ে কালাইয়াপাড়া মসজিদ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার, বাহামকান্দা হালিম ফরাজির বাড়ি-সংলগ্ন মাদরাসা থেকে আলম শিকদারের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিলোমিটার ও বাহানকান্দা হাকিম হাওলাদারের বাড়ি থেকে সাইদ ফকিরের বাড়ি-সংলগ্ন কালভার্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাজুরা এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। এখানকার শিশুদের যদি মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করাতে হয়, তবে তাদেরকে সাত থেকে আট কিলোমিটার দূরে মহিপুর বা কুয়াকাটা যেতে হবে। যা বেশিভাগ পরিবারের শিশুদের জন্য প্রায় অসম্ভব। ফলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে।

বিদ্যালয়টির অভিভাবক শ্রেণি সদস্য মো: শামসুল হক হাওলাদার বলেন, ‘শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে দু’টি কালভার্টসহ সাত-আট কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা প্রয়োজন। না হলে এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।’

অভিভাবকরা আরো জানান, বহুবার বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ ও আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে হতাশা বাড়ছে এলাকায়। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে খাজুরা। এখানকার কাঁচা রাস্তাগুলোর স্ক্রিম দেয়া আছে, খুব দ্রুত পাকা করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করব। আশা করি অচিরেই সমাধান হবে।’

খাজুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে ও ভাঙা সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যায়। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, কবে অবসান হবে এই অবহেলার?