টাঙ্গাইলের মধুপুরের পাহাড়ীয়া গড়াঞ্চলে নতুন ধরনের আদা চাষে কৃষকরা আনন্দে আছেন। কম খরচে বেশি ফলন পাওয়ার কারণে বস্তায় আদা চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার পাশে কিংবা অপ্রয়োজনীয় জমিতে এই চাষ শুরু করেছেন তারা, এবং চলতি মৌসুমে ৮৭০ হেক্টর জমিতে নতুন এই পদ্ধতিতে আদা চাষ হয়েছে।
মধুপুরের মাটি ও পরিবেশ সকল ফসল চাষের জন্যে উপযোগী ও পরিবেশ বান্ধব। তাই মৌসুম ভেদে সকল কিছুই এখানে আবাদ হয়ে থাকে। আনারস প্রধান অর্থকরি ফসল হলেও সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে- আদা, হলুদ, পেঁপেসহ নানা জাতের মৌসুমী ফসল। কিন্তু বর্তমানে মধুপুর উপজেলার পিরোজপুর, মির্জাবাড়ী, চাঁনপুর, মোটেরবাজার, গায়োবাজার, লাউফুলা, জয়নাতলী ভবানটিকীসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।
ফুলবাড়ি গ্রামের চাষি ফজলুল হক বলেন, ‘চলতি বছর আমি চার হাজার বস্তায় আদা আবাদ করেছি। বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। অতি বৃষ্টি, খড়াসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই আদার ক্ষতি করতে পারে না। বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিলে ওই বস্তাগুলো দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এছাড়া পোকার আক্রমণও অনেক কম।’
মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করিনি। এবার ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় চাষ করলেও তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছি। এ বছর আমার খরচ হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। আশা করছি পাঁচ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবো। এ পদ্ধতি আদা চাষের জন্য অনেক নিরাপদ ব্যবস্থা। তাই কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন দিন দিন।’
গারোবাজারের কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করিনি। এবার ছয় হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। অধিকাংশই বাড়ির পাশে পতিত জায়গা ব্যবহার করেছি। গাছগুলো বেশ সতেজ। ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবানটিকী গ্রামের শিমুল মন্ডল জানান, ‘আমি চৈত্র মাসে ৩০ শতাংশ জামিতে আদা আবাদ করেছি। আট মাস পর কার্তিক মাসে আদা উত্তোলন করে বাজারজাত করতে পারবো।’
আদা ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গেল মৌসুমে আগাম আদাক্ষেত কিনেছিলাম। অনেক আদা পোকায় নষ্ট করেছিল। তাই চলতি মৌসুমে বস্তা ও ক্ষেতে আবাদকৃত আদা আগাম কিনেছি। এখনো কোন গাছ পোকায় নষ্ট করেনি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পরামর্শে কৃষকরা মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাইসহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে পতিত জমি কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদা চাষ করছেন। সার-গোবর ছাড়া মাঝে মাঝে পানি দিলেই আদা গাছ পরিপুষ্ট হয়। ফলন ভালো হয়।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, ‘এ বছর মধুপুর উপজেলায় ৮৭০ হেক্টর জমিতে ও বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। মধুপুরের সবগুলো ইউনিয়নে বর্তমানে কম-বেশি বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। কম খরচে আদা চাষের আগ্রহ ও পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিপণন বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে আসছে। বসতবাড়ি ও অন্য ফসলের সাথে ফসল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ। কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে বিপণন করা সম্ভব বলে আশা করছি। শুধু তাই নয় মধুপুরের অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভবনার দ্বারও তৈরি হয়েছে।’