গৌরনদীতে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রসূতির মৃত্যু, কর্তৃপক্ষ পলাতক

চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে চিকিৎসক রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে কোনো কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের সব স্টাফ পালিয়ে যান।

আরিফিন রিয়াদ, গৌরনদী (বরিশাল)

Location :

Barishal
মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। |নয়া দিগন্ত

বরিশালের গৌরনদীতে সিজারিয়ান অপারেশনের অবহেলা, অনিয়ম ও চিকিৎসাগত ত্রুটির অভিযোগে সাথি আক্তার পরী (২২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। ঘটনার পরপরই ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বাটাজোড় এলাকার মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত পরী উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রামের ইমন আকনের স্ত্রী।

পরীর শ্বশুর নজরুল আকন জানান, শনিবার সকাল ১১টার দিকে তার পুত্রবধূকে গৌরনদীর বাটাজোড় এলাকার মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। প্রথমে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: রাজিব কর্মকার নরমাল ডেলিভারির কথা বললেও পাঁচ হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হঠাৎ সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। সিজারে আপত্তি জানালে কর্তৃপক্ষ বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেন।

নজরুল জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একজন চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা পর সিজার সম্পন্ন হয়। সিজার করা চিকিৎসক অপারেশন শেষ করেই তড়িঘড়ি করে ক্লিনিক ত্যাগ করেন। তবে পরিবারের কেউ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নাম জানাতে না পারলেও ক্লিনিকের প্যাথোলজির ভেতরে লুকিয়ে থাকা ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রান্ত হালদার জানান ওই চিকিৎসকের নাম ডা: সমিরন হালদার।

নজরুল অভিযোগ করেন, অপারেশনের আধাঘণ্টা পর পরীকে বেডে আনা হলে তার শরীর সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ সময় কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায় ক্লিনিকে অক্সিজেন নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে। পরে একজন স্টাফ অক্সিজেন আনতে গিয়ে আর ফেরত আসেননি।

নজরুল আকন আরো জানান, পরীর অবস্থা আরো খারাপ হলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে চিকিৎসক রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে কোনো কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের সব স্টাফ পালিয়ে যান। আমরা তখন পাশের একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করালে তিনি জানান, পরীর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিবারের অভিযোগ, অপারেশনের সময় অবহেলা, পর্যাপ্ত জরুরি সরঞ্জাম না থাকা এবং চিকিৎসা বিলম্বেই পরীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. সমিরন হালদার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্যও পাওয়া সম্ভব হয়নি।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।