পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে ভূরুঙ্গামারীর শহিদুলের

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহহীন শহিদুল ইসলামের মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা

Location :

Kurigram
পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাতের বেলা ভূরুঙ্গামারীর শহিদুল
পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাতের বেলা ভূরুঙ্গামারীর শহিদুল |নয়া দিগন্ত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহহীন শহিদুল ইসলাম (৪৮)। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় গৃহহীন শহিদুল তার পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর চান তিনি।

জানা গেছে, শহিদুল একসময় অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপরি তুলে দুই সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সবকিছু ছেড়ে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যান। শহিদুলের পরিবার যেখানে বসবাস করত সে জায়গাটির মালিক জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহার শুরু করেন। কিছুদিন পর শহিদুলের পরিবার ঢাকা থেকে ফিরে এসে গৃহহীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকে পরিবারটি বিভিন্ন দোকানের বারান্দা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন শুরু করে। এভাবে কেটে যায় প্রায় ১১ মাস।

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের বারান্দায় আশ্রয় নেয় পরিবারটি। উপজেলা পরিষদের এক কর্মী তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেয়। এতে পরিবারটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পরিবারটি গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের প্রস্তুতি নিলে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে পড়ে।

শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া বলেন, ‘আমাগো বাড়িঘর নাই। কয়েকদিন ধইরা উপজেলার বারান্দায় থাকতাছি। বৃহস্পতিবার একজন আইসা পোঁটলাপুটলি নিয়া থানায় দিয়া আমাগো তাড়ায়া দিছে। রাইতে ঠান্ডা পরে। ছোট দুইডা বাচ্চা নিয়ে এহোন আমরা কই যামু? কোনহানে থাকমু?’

শহিদুল ইসলাম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘নিজের জায়গা-জমি না থাকায় কিছুদিন কবরস্থানের মতো ভুতুড়ে জায়গায় আছিলাম। একজন দয়া করে তার জমির এক কোনে থাকতে দিছিলো। শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঝাড়ু দেয়ার কাম করতাম। মায়ের অসুখের কারণে ঢাকায় যাই। এতে ঝাড়ু দেয়ার কাম চইলা যায়। দুইডা বাচ্চা, অসুস্থ বৃদ্ধ মা আর বউরে নিয়ে দারুণ কষ্টে দিন পার করতাছি। কাম পাইলে খাইবার পাই, কাম না জুটলে না খাইয়া থাকোন লাগে। শুনছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘর না-কি খালি পইড়া থাকে, একটা ঘর দিলে বউ, পোলাপান আর অসুস্থ মাকে নিয়া রাইতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম।’

শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে সবকিছু ছেড়ে তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরে বসবাস করতে চাইলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপ জন মিত্র বলেন, ‘শহিদুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করলে তাকে ঘর দেয়া হবে।’