‘বুধবার সকালে হাঁটতে বের হলে পাঁচজন অপরিচিত লোক আমাকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে নেয়। তারপর আমাকে মারধর করে দাঁড়ি টানে, গালাগাল করে ও নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমার মাথায় টিউমার অপারেশনের জায়গায় আঘাত করে। তখন আমি জ্ঞান হারাই ফেলি, পরে দেখি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন অপহৃত মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানী।
তিনি বলেন, ‘এর আগে বারবার হুমকি দিয়েছে। খুতবায় ইসলামী দল, বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলতে ও মুসলিম মেয়েকে হিন্দু ছেলের বিয়ে করা জায়েজসহ নানা ইসলামবিরোধী ফতোয়া দিতে চাপ দিত। সরকারের কাছে আমার সাথে ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনার বিচার চাই।’
এদিকে টঙ্গী থেকে অপহৃত হয়ে পঞ্চগড়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া টিঅ্যান্ডটি সরকারি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানীর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ। বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে আলেম-ওলামা ও শিক্ষার্থীরা। তারা হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবিসহ দেশে ইসকন কর্তৃক ঘটে যাওয়া গুম, খুন ও ধর্ষণসহ সকল অপকর্মে জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন আপামর জনতা।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর গাজীপুরের টঙ্গীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।
এতে দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় ‘ইসকন নিষিদ্ধ করো, ‘আলেম নির্যাতনের বিচার চাই’ স্লোগানে মুখরিত হয় স্টেশন রোড এলাকা। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেন গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মুফতি মাসউদুল করিম, মুফতি নাসির উদ্দিন খান, গাজীপুর-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী সরকার জাভেদ আহমেদ সুমন, সরকার শাহানুর ইসলাম রনিসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুসল্লিরা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের ওপর হামলার পর এবার টঙ্গীর খতিব মাওলানা মুহিবুল্লাহ মাদানীকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তারা দ্রুত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও ইসকনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানান।
অন্যদিকে একই দিন বিকেলে গাজীপুর শহরের জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল বের করে আলেম-ওলামা ও হেফাজতের নেতারা। মিছিলটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রদক্ষিণ শেষে ৩৬ই জুলাই চত্বরে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী, মুফতি আবদুল মান্নান, মাওলানা হাবিবুর রহমান মিয়াজি, ছাত্রনেতা মুবাশ্বির হোসাইন প্রমুখ।
তারা বলেন, ‘ইসকন পরিকল্পিতভাবে দেশের মুসলমানদের উসকে দিয়ে ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় তবে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
বক্তারা ১৩ বছর বয়সী মাদরাসাছাত্রী আশা মনির ধর্ষণের ঘটনায়ও ইসকনের সংশ্লিষ্টতা তদন্তের দাবি জানান।
এদিকে অপহরণের বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে। মামলার বাদিরা অপহরণকারীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করছেন। শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি জানা যাবে।’



