তিস্তার পানি কমলেও লালমনিরহাটে দুর্ভোগ কমেনি

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্ট পানির সমতল ৫২ মিটার। যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে।

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট

Location :

Lalmonirhat
নদীর পানি কমলেও তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি
নদীর পানি কমলেও তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি |নয়া দিগন্ত

কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে ভারীবর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও মঙ্গলবার তা অনেকটাই কমে যায়। তবে পানি কমলেও তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নদী-সংলগ্ন পাঁচটি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্ট পানির সমতল ৫২ মিটার। যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে। কাউনিয়া পয়েন্ট পানির সমতল ২৮ দশমিক ৮০ মিটার। যা বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন।হাতীবান্ধা উপজেলার চর ডাউয়াবাড়ী, সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও গোর্বধন এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত রয়েছে। এসব বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা ঝুঁকি নিয়ে তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন তারা।

অপরদিকে বন্যার পানি ধীরগতিতে নেমে যাওয়ার এখনো লালমনিরহাটে নদী-সংলগ্ন আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম বলে, ‘স্কুলে গেছিলাম, ক্লাসরুমে পানি থাকায় বাড়ি ফিরে এসেছি। স্যাররা স্কুল বন্ধ দিয়েছেন।’

চরের কৃষক গফুর মিয়া (৬৫) বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ আমন ধানের খেত তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। চরে এখনো বানের পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে আছে।’

সরকারি রাস্তা আশ্রয় নেয়া আফজাল হোসেন (৬০) বলেন, ‘প্রতিবছরেই হামার (আমার) বাড়িতে বন্যার পানি উঠে। এখন পানি কমতে শুরু করায় তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে রাস্তার ধারে আছি। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছি না।’

লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান বলেন, ‘বন্যার পানির কারণে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে ক্লাসরুম থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি জমে আছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে পাঠদান স্বাভাবিক হবে।’

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, রোববার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি আর বাড়বে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।