সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর, ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার

শনিবার (১৭ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ও নদী ভাঙনের আশঙ্কায় থাকা পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

মো: রফিকুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল)

Location :

Babuganj
সন্ধ্যা নদীর ভাঙন
সন্ধ্যা নদীর ভাঙন |নয়া দিগন্ত

বরিশালের বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর। ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার, বিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা।

শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার মধ্যে আটটি বসতঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো শতাধিক বাড়িঘর। গত কয়েক দিনে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া, মোল্লারহাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

শুক্রবার বিকেলে আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনায় কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের মোল্লারহাট এলাকার বেশ কিছু অংশজুড়ে দেবে যায়। ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে আটটি বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়ে যায়। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হবে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ভাঙনের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে লোকজন।

ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন আকন (৫২), মরহুম কাদেম আকনের, আলী চৌকিদার (৭৫), মরহুম হামেদ মাঝি, রাসেল মাঝি, হাচেন মাঝি, সাইফুল ঘরামী (৫০), আদম আলীর বসতঘর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নদীগর্ভে চলে গেছে বলে জানা গেছে।

শনিবার (১৭ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ও নদী ভাঙনের আশঙ্কায় থাকা পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুরে তাদের বাড়ির সামনে বিশাল ফাটল দেখা দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ চোখের পলকে আটটি বসতবাড়ি ও ফসলের জমিনসহ সন্ধ্যা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দু’বছর আগে মোল্লারহাট নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মোল্লারহাটের কিছু অংশ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের নামে অর্থ ব্যয় করেও কিছুই হয়নি।

বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা বেশি থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে ওই গ্রামের বড় একটি অংশ। হুমকিতে পড়েছে এলাকার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া তাবলিকুল ইবতেদায়ী মাদরাসা, একটি মসজিদ, স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। ভাঙন আতঙ্কে তীরের মানুষরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আলী চৌকিদার বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে তাদের বাড়িঘরসহ বিশাল এলাকা ফাটল ধরে দেবে যেতে থাকে। বিকেলের মধ্যে এসব এলাকা ও বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। দিনের বেলা হওয়ায় কোনোরকমে তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন। সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব।

ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা জানায়, গত দু’তিন বছর আগে মোল্লারহাট বাজারটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আড়িয়াল খাঁ নদ, সুগন্ধা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।