মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

বিগত শাসকরা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল

শনিবার (৩ মে) সকাল ১১টার দিকে তাফহীমুল কুরআন আলিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পিরোজপুর প্রতিনিধি

Location :

Pirojpur Sadar
নয়া দিগন্ত

বিগত শাসকরা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল মন্তব্য করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো: নুরুল হক বলেছেন, ‘বিগত শাসকদের প্রধান শত্রু ছিল আলেমরা। তারা আলেমদেরকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নানা রকমের নির্যাতন করেছে। অনেক নির্যাতনের পর আল্লাহ আমাদের সন্তানদের আবাবিল রূপে পাঠিয়ে অত্যাচারী জালিম শাসকের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করেছেন।’

শনিবার (৩ মে) সকাল ১১টার দিকে ‘নকলমুক্ত পরিবেশ, গড়বো সোনার বাংলাদেশ’ শিরোনামে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তাফহীমুল কুরআন আলিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সকাল ১০টার দিকে দারুল কোরআন মহিলা মাদরাসার একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

প্রফেসর মিঞা মো: নুরুল হক বলেছেন, ‘বিগত শাসকরা মাদরাসা সার্টিফিকেট এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটের ভেতরে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যার ফলে ছাত্ররা আর মাদরাসায় পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠে না। বেশিরভাগ ছাত্ররা মাদরাসার পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করত। শিক্ষার্থীরা আলেম পাশের পর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চলে যেত।’

এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী।

মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল আন্দোলনে আলেমদের অনেক অবদান রয়েছে। এ সময় তিনি ২০২৪-এর আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, যারা বিভিন্ন রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তিনি তাদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

মিঞা মো: নুরুল হক বলেন, ‘এখানে একটি প্রোগ্রামের চিন্তাও করা যেত না, যদি না চব্বিশের বিপ্লব না হতো। অতীতে আমরা দেখেছি, এ ধরনের প্রোগ্রাম হলে সেখানে জঙ্গি নাটক সাজানো হতো।’

তিনি বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের চাওয়া ছিল একটি শোষণমুক্ত সমাজ। আমাদেরকে সেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য কাজ করে যেতে হবে। অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে, শিক্ষকরা চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় অন্যত্র চলে গেছে। বিগত ১৫ বছরে মাদরাসার সার্টিফিকেট দিয়ে কোথাও কোনো চাকরি হতো না। মাদরাসা সার্টিফিকেটের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কোন বোর্ডে পাশের হার কত বেশি, কোন বোর্ডে বেশি এ প্লাস পেয়েছে এই নিয়ে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। পড়ালেখা ছিল না, শুধু পাশের ছড়াছড়ি ছিল। শিক্ষকদের বেশি নম্বর দেয়ার জন্য বলা হতো। বেশি নম্বর না দিলে শিক্ষকদেরকে জবাবদিহির মুখে পড়তে হতো। কম নম্বর দেয়া হলে শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয়েছে, কেন কম দেয়া হল। কোন শিক্ষকের খাতায় বেশি ফেল করলে তাকে পরবর্তী বছরে খাতা দেয়া হতো না।’

মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এসব আর চলতে দেব না। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নেয়েছি, শিক্ষকরা কোনোরকম চাপ ছাড়াই খাতা দেখবে। খাতায় যা নম্বর পায় তাই দিবেন। এতে করে ছাত্ররা পড়ালেখা করবে। শিক্ষকদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। নকল বন্ধ হবে।’

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের সন্তানরা আমাদেরকে কথা বলার যে সুযোগ করে দিয়েছে, এখন যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করি তাহলে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। আপনারা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শেখাবেন নকল করা হারাম, হারামভাবে চাকরি নিয়ে উপার্জন করলে তাও হারাম, আর হারাম উপার্জনের অর্থ দ্বারা এবাদত করলে তাও কবুল হবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামীম সাঈদী শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত, শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। আপনাদেরকে সমাজের সকলেই সম্মান করে, ভালোবাসে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আল্লামা সাঈদী ফাজিল ও কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের সমমানের মর্যাদার জন্য আন্দোলন করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন।’

শামীম সাঈদী মাদরাসা শিক্ষকদের নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে পাশ করা ছিল খুব সহজ, পড়ালেখা ছিল না। কোরানের শিক্ষাই যে সবচেয়ে উন্নত শিক্ষা ছাত্রদের সেটা বোঝানোর জন্য তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, মাদরাসা ছাত্রদেরকে আল্লামা সাঈদীর মতো সাহসী আলেম হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।’

মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মাওলানা শফিকুল ইসলাম। এছাড়া পিরোজপুর সদর উপজেলাধীন সকল মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন।