কালিয়াকৈর পৌরসভায় ভুয়া কাগজপত্রে টেন্ডার, তদন্তে দুদক

দুদকের কর্মকর্তারা সরেজমিনে কাজ পরিদর্শন করেন এবং পৌরসভা থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাগজপত্র ও টেন্ডারসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Kapasia
দুদকের অভিযান
দুদকের অভিযান |নয়া দিগন্ত

ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছে ব্রাউন ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। এসময় দুদকের কর্মকর্তারা সরেজমিনে কাজ পরিদর্শন করেন এবং পৌরসভা থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাগজপত্র ও টেন্ডারসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

জানা যায়, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা থেকে ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকার কয়েকটি উন্নয়ন কাজের টেন্ডার বাগিয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রাউন ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। কোনো যাচাই-বাছাই না করেই কাজগুলো দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র মজিবুর রহমান।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের উপপরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে টেন্ডার দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করতে দুদকের ঢাকা অফিস থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে দুদকের একটি টিম বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে। এসময় পৌরসভা থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয় এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযানে উল্লেখিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি কর্তৃপক্ষের কেউ নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই দু’দিন সময় দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারে তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক ও কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওসার আহমেদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের বিষয়ে দুদকের একটি টিম কালিয়াকৈর পৌরসভার কয়েকটি প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে এক ঠিকাদারের অভিযোগ তদন্ত করেছে। আমরা তাদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছি।’

কালিয়াকৈর পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এপ্রিলে আইইউজিই প্রকল্পের চতুর্থ প্যাকেজের অধীনে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক, আনসার একাডেমির ভিতরের রাস্তা, আনসার একাডেমির তিন নম্বর গেইটের বিপরীত পাশের রাস্তা ও ড্রেন, পাশা গেইটের রাস্তা, এপেক্স ওয়েভিং রাস্তা, কুহিনূর স’মিলের রাস্তা, কালিয়াকৈর লালটেকিরের রাস্তা এলাকায় ড্রেনসহ দু’টি রাস্তা নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। মোট ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি। দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই না করেই ব্রাউন ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। পরে কাজ না পেয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদার দুদকের ঢাকা কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

এর আগে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি স্ত্রী-সন্তান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ দখলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মুজিবর রহমানকে তলব করেছিল দুদক। কিন্তু অজানা কারণে সবকিছু চাপা পড়ে যায়।

জানা গেছে, মজিবুর রহমান টেন্ডারবাণিজ্য, ঝুটবাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লোপাট, জনবল নিয়োগে অনিয়ম, পৌর এলাকায় অনিয়মিতান্ত্রিকভাবে পরিবহন খাত থেকে টোল আদায়, বন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল ও বিক্রি করা থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। কালিয়াকৈরে বানিয়েছেন আটটি বহুতল ভবন ও আলিশান বাড়ি, এছাড়া রাজধানী ও বিদেশেও রয়েছে ফ্ল্যাট-বাড়ি। চতুর মজিবুর রহমান বেশির ভাগ সম্পদ করেছেন স্ত্রী আজমেরি বেগম, নিকটাত্মীয় ও অনুসারীদের নামে।

স্থানীয়রা জানায়, মজিবুর রহমান কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি আওয়ামী লীগের তিন আমলেই কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাথে ছিল তার দহরম-মহরম সম্পর্ক।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।