লালমিনরহাট সীমান্তে ‘দেখামাত্র গুলি’ নীতি বহাল

২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আট বছরে লালমনিরহাট সীমান্তে ৩৫ বাংলাদেশীকে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে।

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট

Location :

Lalmonirhat
লালমিনরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত
লালমিনরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত |সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিতর্কিত শ্যুট অন সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি লালমিনরহাট সীমান্তে এখনো বহাল রয়েছে। গত আট বছরে লালমিনরহাট সীমান্তে ৩৫ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ।

জানা গেছে, দেশের উত্তরে সর্বশেষ ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা ছোট একটি জেলার নাম লালমিনরহাট। পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলাটি পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি তিস্তা থেকে বুড়িমারী স্থলপথ প্রায় ১২০ কিলোমিটার। আর সীমান্তপথ ২৮৪ কিলোমিটার হলেও ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। অরক্ষিত সীমান্তপথ। পানি সীমান্ত ২৪ কিলোমিটার। ফলে দু’ দেশের মানুষ অরক্ষিত সীমান্ত পথে গবাদিপশু পাচার, আত্মীয়র সাথে দেখা ও খোঁজখবর নিতে সীমান্ত পারাপার করে থাকেন। শূন্যরেখার কাছে কৃষিকাজ কিংবা মৎস্য আহরণের জন্যও অনেককে সীমান্ত অতিক্রম করতে হয়। ভুল করে কেউ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলে বা অরক্ষিত সীমান্ত সামান্য অতিক্রম করলেই বিএসএফের বিতর্কিত শ্যুট অন সাইট নীতিতেই পড়ে যায়।

ফলে সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফের বিতর্কিত শ্যুট অন সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতিতে সীমান্তে বহাল রয়েছে। এমনকি বিএসএফের আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন, হত্যা, গুলিতে আহত, নির্যাতন, শুন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন ও নতুন করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফের পুশইনের ঘটনা নিয়ে প্রায় উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে।

অধিকার নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সারাদেশে বিএসএফের সদস্যদের হাতে অন্তত ৫৮২ জনের মৃত্যু ও ৭৬১ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আট বছরে লালমনিরহাট সীমান্তে ৩৫ বাংলাদেশীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে।

ওই মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৭ সালে সাতজন, ২০১৮ সালে তিনজন, ২০১৯ সালে দু’জন, ২০২০ সালে ছয়জন ও ২০২১ সালে সাতজন, ২০২২ সালে পাঁচজন, ২০২৩ সালে তিনজন ও ২০২৪ সালে দু’জন বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

অথচ সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি বিএসএফ। হাসিনা-মোদি সরকার আন্তর্জাতিক সীমান্তে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটিও বিচার হয়নি।

দুর্গাপুর ও দহগ্রাম সীমান্তবাসীরা বলছেন, বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন সহ্য করতে না পেরে ভারত বাংলাদেশের ওপর যেন আরো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। তাই সীমান্ত শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া, ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন ও প্রায় পুশইনের ঘটনায় বিএসএফের আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধই হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো: শাকিল আলম, এসপিপি বলেন, ‘সীমান্তে কে কি কারণে হত্যার শিকার হয়েছে তা এ মুহূর্তেই বলা সম্ভব নয়।’ এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।