কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা
চিরতরে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজ হাতে নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে ফেললেন পিঞ্জরি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কোটালীপাড়া উপজেলার অন্যতম নেতা মো: আবু ছাইদ শিকদার।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পুকুর ঘাটে নির্মিত নৌকা প্রতীকটি ভেঙে ফেলেন তিনি।
আবু সাঈদ শিকদার গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ধর্ম মন্ত্রী, সাবেক আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি প্রয়াত আব্দুল্লাহ মিয়ার ভাগ্নে।
জনশ্রুতি আছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে, আবু সাঈদ শিকদার যথেষ্ট প্রভাবশালী একজন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন।
ঘটনাটি নিয়ে কোটালীপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ভিতরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আবু ছাইদ শিকদার নৌকার ভাস্কর্য ভাঙার সময় বলতে থাকেন, ‘জীবনে যতদিন বেঁচে আছি, আর কোনোদিন আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকবো না। তাতে যদি আগামী দিনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তারপরেও আর কোনোদিন আওয়ামী লীগ করবো না।’
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ও পিঞ্জরি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পিঞ্জরি ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শিকদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যে দেশের নেতা বা নেত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে, সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যায়, এ ধরনের দল করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ধরনের দল করা নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দেশের সকল ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে হয়রানি, হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলার নেতারা জেলে রয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন যে দলই করি না কেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাথে আর কোনোদিন থাকবো না। তাই আমার বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে নির্মিত নৌকা প্রতীকের ভাস্কর্যটি আমি নিজ হাতে ভেঙে ফেলেছি।’
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তাদের সাথে কোনো প্রকার কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এবং তার মামা আব্দুল্লাহ মিয়া ধর্মমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। সেই সমস্ত কালো টাকা সাদা করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার নাটক করছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব করে আসল সত্যকে এবং সকল প্রকার দুর্নীতিকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন সঠিক তদন্ত করলে তাহার শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।’
এছাড়াও স্থানীয় জনগণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এভাবে করে আবু সাঈদ শিকদার দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ দলের ওপরে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত প্রকাশ করেন।’