জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার এক মামলায় দৈনিক নয়া দিগন্তের মাল্টিমিডিয়া বিভাগের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মো: মোজাহিদের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। জুলাই-আগস্ট মহাবিপ্লবের পক্ষের একজন সৎ ও প্রতিবাদী সাংবাদিককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলায় আসামি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারাও।
জানা যায়, গত ২৯ মে সোহেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (বাসন আমলি) আদালতে এ মামলা (নম্বর- ৩৪১/২০২৫) করেন। আদালত মহানগরীর বাসন থানাকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকালে পুলিশ আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই করতে গেলে সাংবাদিক মোজাহিদ জানতে পারেন তিনিও ওই মামলার আসামি। এ সময় তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টি তুলে ধরলে জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মামলার নথি থেকে বাদির ঠিকানা সংগ্রহ করে সাক্ষাৎকার নিতে সেখানে ছুটে যান। তবে সাংবাদিকরা ওই ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব পাননি।
মামলায় বাদি সোহেলের বাবার নাম ‘গিয়াস উদ্দিন, ঠিকানা- তিন ভাই ভিলা, দত্তপাড়া লেন, মোল্লা রোড, থানা- গাজীপুর সদর’ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এ ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। ঠিকানায় ডাকঘর হিসেবে ‘এরশাদ নগর’ উল্লেখ করা হলেও ওই ওয়ার্ডের স্থগিত কাউন্সিলর সফিউদ্দিন সফি জানান, তার এলাকা দত্তপাড়ায় ‘দত্তপাড়া লেন’ ও ‘মোল্লা রোড’ নামে কোনো রাস্তা নেই।
এদিকে মামলার নথি থেকে বাদির আইনজীবী মাসুদ পারভেজের মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে একজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে বিষয়টি আমি ইতোমধ্যেই জানার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি ওই সাংবাদিকের নাম বাদ দেয়ার জন্য এবং আরো কোনো নিরীহ-নির্দোষ ব্যক্তির নাম থেকে থাকলে তদন্ত করে বাদ দেয়ার জন্য বলে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, সাংবাদিক মোজাহিদের নাম মামলা থেকে বাদ দেয়ার জন্য বাদি অ্যাফিডেভিট দিতেও প্রস্তুত। তবে মামলার বাদির সঠিক ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর তার জানা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে সাংবাদিক মোজাহিদকে বৈষম্যবিরোধী মামলায় আসামি করায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন, গাজীপুরের সভাপতি ও গাজীপুর প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির দ্বিতীয় নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন, ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: হেদায়েত উল্লাহ, গাজীপুর মহানগর সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গাজী খলিলুর রহমান, টঙ্গী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: মেরাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব চৌধুরীসহ জেলা ও উপজেলা সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক ফোরাম গাজীপুর জেলা সেক্রেটারি মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মোজাহিদ সাংবাদিক ফোরাম শ্রীপুর উপজেলার সেক্রেটারি। তিনি সব সময় অন্যায্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি আপসহীন ছিলেন, তাই তাকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের সময় গাজীপুর সদর থানায় রাতভর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে একটি মহলের বিভিন্ন অন্যায়-অপকর্ম আপসহীনভাবে তুলে ধরায় ওই মহলটি তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ মামলা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।’
দৈনিক ইনকিলাবের শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি এমএ মতিন বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। অথচ সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায়। মোজাহিদের নামে দায়ের করা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মূখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাছের বলেন, ‘সাংবাদিক মোজাহিদকে আমরা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষ ও পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই জানি। তাকে কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার সুযোগ নেই।’