দাদাবাড়ির সেই সফরই হয়ে রইল নিঝুম-নাফির শেষ স্মৃতি

নিঝুম ও নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সাথে দাদাবাড়ি ভোলায় বেড়াতে এসেছিল। গ্রামের মাটি, খেলার মাঠ, দাদার হাত ধরে হাঁটা সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি।

শাহাদাত হোসেন শাহীন, ভোলা

Location :

Bhola
দাদাবাড়ির সেই সফরই হয়ে রইল নিঝুম-নাফির শেষ স্মৃতি
দাদাবাড়ির সেই সফরই হয়ে রইল নিঝুম-নাফির শেষ স্মৃতি |ছবি : নয়া দিগন্ত

নিঝুম ও নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সাথে দাদাবাড়ি ভোলায় বেড়াতে এসেছিল। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ দুই ভাই-বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩) ও আরিয়া নাশরাফ নাফি (৯) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বড় বোন নিঝুমের মৃত্যুর ১৪ ঘণ্টা পর না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় ছোট ভাই নাফি।

দুই ভাই-বোনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের আহাজারিতে। সন্তান হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ বাবা-মা, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন দাদা।

নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত একই প্রতিষ্ঠানে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে স্কুল চত্বরে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লাগলে সেখানে গুরুতর দগ্ধ হয় তারা।

নিঝুমের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেলে তাকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। ছোট ভাই নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে সেও মারা যায়।

ভাইয়ের চিকিৎসা চলায় নিঝুমের লাশ গ্রামে নেয়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে উত্তরা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর রাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসে। দুই ভাই-বোনের মৃত্যুতে ভোলার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। খেলার সাথীরা কাঁদছে, চাচাতো ভাই-বোনেরা বিলাপ করছে, দাদার মুখে শুধু একটাই কথা- ‘এরা তো সবে বাঁচতে শিখেছিল।’

নিঝুমের চাচা হাসান জানান, সন্তানদের ভালো মানুষ করতে আশরাফুল ইসলাম নিরব ১৫-১৬ বছর আগে পরিবার নিয়ে ভোলা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। মাইলস্টোন স্কুলে ভর্তি করান ছেলেমেয়েকে। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল সব স্বপ্ন, শেষ হয়ে গেল এক সুখী পরিবার।

নিঝুম ও নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সাথে দাদাবাড়ি ভোলায় বেড়াতে এসেছিল। গ্রামের মাটি, খেলার মাঠ, দাদার হাত ধরে হাঁটা সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি। সেই সফরই তাদের জীবনের শেষ গ্রামভ্রমণ হয়ে রইল।