বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগামী তিন মাসে আরো বেশকিছু উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: এ কে এম মশিউল মুনির।
সোমবার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সেমিনার কক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
পরিচালক জানান, ৫শ’ বেডের এ হাসপাতালটি এক হাজার বেডে উন্নীত করা হলেও জনবল মঞ্জুরি বাড়েনি। অথচ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। ৫শ’ বেডের মঞ্জুরিকৃত জনবলেরও অর্ধেক পদই শূন্য। সে হিসেবে আড়াইশ বেডের জনবল দিয়ে এখন প্রায় ২ হাজার রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। ফলে পায় সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তার পরেও গত কয়েক মাসে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হাসপাতালটির সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে।
তিনি হাসপাতালের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত অর্থ বছরে শের-এ-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনডোরে ১ লাখ ৯৬ হাজার রোগী চিকিৎসা সুবিধা লাভ করেছেন। একই সময়ে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে আরো প্রায় পৌনে ৬ লাখ রোগী চিকিৎসা সুবিধা লাভ করেন বলে জানান তিনি। এমনকি হাসপাতালটির জরুরি বিভাগেও ২ লাখ ২৩ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। গত অর্থ বছরে হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে ৩১ হাজার ৩৯৭জন রোগীর বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রপাচার হয়েছে। যার মধ্যে চোখের অনেক জটিল অপারেশনও রয়েছে।
পরিচালক আরো জানান, হাসপাতালটির বেড প্রতি এখন ২.১৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। প্রায় ৫০ বছরের পুরনো এ হাসপাতালে এখনো কোনো এমআরআই মেশিন নেই। তবে একটি সিটি স্ক্যান, দুইটি এক্স-রে ও চারটি পোর্টেবল এক্স-রে ও চারটি আল্ট্রাসোনো মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিকল ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টগুলো সচল করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরো নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। মেডিসিন ওয়ার্ডের চারটি ইউনিট হাসপাতালের মূল ভবনে ফিরিয়ে আনার কাজও শুরু হয়েছে। একই সাথে মেডিসিন বিভাগের সব আউটডোর সাবেক মেডিসিন ওয়ার্ডের নিচতলায় স্থানান্তর কাজ দু-এক দিনের মধ্যেই শেষ হবে।
পরিচালক বলেন, হাসপাতালের নিজস্ব ৩৩২ চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ২৪০ জন। জরুরি বিভাগে নয়জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন। হাসপাতালটির সাতটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ছয়টি সচল থাকলেও চালক আছে তিনজন।
তিরি আরো বলেন, রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগে সব স্বেচ্ছাসেবী ট্রলিম্যানদের অপসারন করে নতুনদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুরাতন সব ট্রলি মেরামত করা হয়েছে। হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিনে মনিটরিং’এর জন্যে সাতটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। নতুন একশটি সিলিংফ্যান সংযোজন করা হচ্ছে। হাসপাতালের সব বাথরুম ও টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য হরিজন সম্প্রদায় থেকে ৯০জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোর পরিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে আটটি অটোমেটিক মেশিন চলমান রয়েছে। আরো ১২টি সংগ্রহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। একইসাথে অতি পুরনো বেডগুলোর পরিবর্তে নতুন একশটি বেড সংযোজন করা হচ্ছে বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনির। আগামী মার্চের মধ্যে ৪৬০ শয্যার ক্যান্সার কিডনি ও হৃদরোগ ওয়ার্ডের ভবন নির্মান কাজ শেষ হবে জানিয়ে পরিচালক বলেন, খুব শীঘ্রই শিশু হাসপাতালটির হস্তান্তর প্রক্রিয়াও শেষ হবে।
অপরদিকে, নানা অভিযোগে একজন ওয়ার্ড মাস্টার সহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া হাসপাতালকে দালালমুক্ত করাসহ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনির জানান, কঠোর নজরদারীর প্রেক্ষিতে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম অনেক জোরদার হয়েছে। এখন চিকিৎসাধীন রোগীদের সিংহভাগই হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। একই সাথে হাসপাতালটিতে টেলিথেরাপী ও এমআরআই মেশিন সহ অন্যান্য সরঞ্জামাদির চাহিদা মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করে জরুরী ভিত্তিতে তা সরবারহ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শের-এ-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: আনোয়ার হোসেন বাবলুও বক্তব্য রাখেন।
এদিকে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার সহ শের-এ-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার দাবিতে সোমবার শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে আন্দোলনকারীরা অনশন সহ কয়েক ঘণ্টা বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। ফলে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হাজার হাজার যাত্রীকে দিনের বেশীরভাগ সময়ই চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
গুটিকয়েক আন্দোলনকারীদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে সোমবার মধ্যরাতে অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। কয়েজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।