চট্টগ্রামে জুলাই শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কহিনূর আক্তারের প্রতিক্রিয়া

‘ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না, তবে রায়ে কিছুটা শান্তি লাগছে’

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

আরফাত বিপ্লব, চট্টগ্রাম ব‍্যুরো

Location :

Chattogram
ছেলের টি-শার্ট দেখাচ্ছেন চট্টগ্রামে জুলাই শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কহিনূর আক্তার
ছেলের টি-শার্ট দেখাচ্ছেন চট্টগ্রামে জুলাই শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কহিনূর আক্তার |নয়া দিগন্ত

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় বাস্তবায়ন চেয়েছেন তারা।

চট্টগ্রামের শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কহিনূর আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে কলিজার টুকরা সন্তানকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে হাসিনার ফাঁসির রায় শুনে একটু শান্তি লাগছে। তবে তিনি রায় দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রামের এমইএস কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন ফয়সাল আহমেদ শান্ত। গত বছরের ১৬ জুলাই নগরীর মুরাদপুর এলাকায় ছাত্র-আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শান্ত, ওয়াসিম আকরাম ও ফারুক।

কহিনূর আক্তার বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসি কার্যকরে যেন তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমার শান্ত একটি সুন্দর, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতো। আমার সন্তান যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে শহীদ হয়েছে, দেশের মানুষ যেন সেই লক্ষ্য পূরণ করে।

শহীদ শান্তর বাবা জাকির হোসেন বলেন, সন্তানকে কোনো কিছুর বিনিময়ে ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয় সেটিই রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া। মনকে কিছুটা শান্তনা দিতে পারছি যে সন্তানকে অন্যায়ভাবে হত্যার বিচারের রায় হয়েছে। তিনি বলেন, ড: ইউনুস চাইলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে ড: ইউনুসের ওপর ভরসা রাখতে চাই।

অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে শহীদ হওয়া ওয়াসিম আকরামের বাবা শফি আলম বলেন, সকাল থেকে রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। দেশবাসীর মতো আমিও আনন্দিত ও খুশি হয়েছি। শুধু হাসিনা নয়, সকল চিহ্নিত হত্যাকারী, হামলাকারী ও নির্দেশদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের গুলিতে চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শুভ হোসেন এই রায়ের পাশাপাশি সকল মামলার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, আর যেন এদেশের কোনো যুবককে রাস্তায় নেমে জীবন দিতে না হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং একই অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের দায়ের করা সকল মামলার সঠিক বিচার চাই।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি, যুবলীগ নেতা বাবরসহ যারা আমাদের ওপর গুলি করেছিল, তাদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন, রেজাউল করিমসহ সকল হোতাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।