প্রধান উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দায় শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক মহলের

‘এ সঙ্কটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কেবল বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ ও কার্যকর চাপের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।’

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)

Location :

Cox's Bazar
রোহিঙ্গা সংলাপে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
রোহিঙ্গা সংলাপে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস |নয়া দিগন্ত

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দায় শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি সমগ্র আন্তর্জাতিক মহলের- বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের ইনানীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এ সঙ্কটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কেবল বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ ও কার্যকর চাপের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।’

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তাদের একমাত্র স্বদেশ মিয়ানমার। আট বছর ধরে বাংলাদেশ তাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু সমস্যার মূলোৎপাটন হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, নতুবা এ অঞ্চল দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।’

তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন, খাদ্য সহায়তা জোরদার করা ও রোহিঙ্গাদের মনোবল ধরে রাখতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

এর আগে, সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস। সেখান থেকে তিনি সরাসরি সম্মেলনস্থল ‘হোটেল বে ওয়াচে’ যান এবং মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।

‘টেক অ্যাওয়ে টু দ্যা হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্যা রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক তিন দিনের এ সম্মেলন রোববার (২৪ আগস্ট) শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতর যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। এতে অংশ নিচ্ছেন জাতিসঙ্ঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সক্রিয় সব স্টেকহোল্ডারসহ অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি।

সম্মেলনের প্রথম দিনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল সরাসরি বিদেশী অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করে নিজেদের অভিজ্ঞতা, নির্যাতনের বর্ণনা ও প্রত্যাবাসনের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন। এ সময় এক রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আশ্রিত, কিন্তু এখানে আমাদের ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে আমাদের দেশ মিয়ানমারে।’

বিদেশী প্রতিনিধিরা এ অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যই এ সমস্যার সমাধান জরুরি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি জানান, তাদের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে, তবে সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের এই সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর রূপরেখা প্রণয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফান্ড গঠন, গণহত্যার বিচার, খাদ্য ও মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গাদের মানসিক শক্তি ও মনোবল বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও জোর দেয়া হবে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শেষ দিনে বিদেশী অতিথিরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা সরাসরি বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে বর্তমান দুঃসহ জীবনের কথা শুনবেন।

কূটনৈতিক মহল মনে করছে, উচ্চপর্যায়ের এই সম্মেলন থেকে নতুন কোনো আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বা উদ্যোগ ঘোষিত হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।