বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এখনো ধোঁয়া উড়ছে

ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার লাগা আগুন রাত পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নিভেনি, ধোঁয়া উড়ছে; ফ্লাইট চলাচল কিছুটা দেরিতে হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে, তদন্ত চলছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ঘটনাস্থলে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ঘটনাস্থলে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে |সংগৃহীত

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন শনিবার রাতে নিয়ন্ত্রণে এলেও রোববার সকাল পর্যন্ত পুরোপুরি নেভানো যায়নি আগুন। সকালেও কার্গো ভিলেজের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ঘটনাস্থলে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে।

তবে আগুনের সূত্রপাত কিভাবে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে, কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শনিবার রাত থেকে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও, এখনো সব ফ্লাইট যথাসময়ে ওঠানামা করছে না।

অন্যদিকে, আগুন লাগার পর বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে পড়লেও রোববার সকাল নাগাদ তা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও কিছু কিছু ফ্লাইট এখনো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা দেরীতে ছাড়ছে।

বিমানবন্দর বন্ধ থাকার সময় যেসব বিমান ছেড়ে যেতে পারেনি, সেসব বিমান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

শনিবার দুপুরে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পরপরই পুরো বিমানবন্দর এলাকা কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই কর্তৃপক্ষ তখন বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করে। ওই সময় যেসব বিমানের ঢাকায় অবতরণ করার কথা ছিল, সেগুলো চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরে অবতরণের নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রায় ছয় ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রাত প্রায় সোয়া ৯টার দিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়।

কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণেও আসে রাত ৯টার কিছুক্ষণ পর। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু খোলা জায়গা ছিল, সেখানে প্রচুর বাতাস ছিল। সে কারণে অক্সিজেনের একটা উপস্থিতি সবসময় ছিল যেটা সবসময় আগুনকে জ্বালিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে।’

এছাড়া কার্গো ভিলেজের যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে ‘দেয়াল দিয়ে খোপ খোপ করে রাখা’ ছিল বলে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের দেরী হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক।

পাশাপাশি খোলা জায়গায় পণ্য রাখা থাকায় সেসব পণ্যে আগুন লেগে আগুন আরো বৃদ্ধি পায় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জাহেদ কামাল।

এছাড়া যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে রাসায়নিক জাতীয় দ্রব্য থাকতে পারে, এমন আশঙ্কায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালানোয় আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লেগেছে বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে যারা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে বিক্রি করেন- পোস্ট দেখা যায় যে কার্গো ভিলেজের আগুনে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শনিবার রাতে বিমানবন্দর এলাকাতেও অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দেখা যায়, যারা বলছিলেন যে আগুনে তাদের বড় অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আগুনের ঘটনায় আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস টিম থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত।’

সাম্প্রতিক এসব অগ্নিকাণ্ড ‘নাশকতা হিসেবে প্রমাণিত’ হলে অথবা ‘আতঙ্ক বা বিভাজন সৃষ্টির’ লক্ষ্যে ঘটানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেলে সেগুলো ‘মোকাবিলা’ করার কথাও বলা হয়।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা ‘গভীরভাবে তদন্ত করছে’ জানিয়ে এতে বলা হয়, নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

সূত্র : বিবিসি