দেশে গত অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ১১২৮ জন। গত সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৩ দশমিক নয়জন। অক্টোবর মাসে নিহত হয়েছে ১৪ দশমিক সাতজন। এই হিসেবে অক্টোবর মাসে প্রাণহানি বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
আজ বুধবার সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নিহত ৪৪১ জনের মধ্যে ১৯২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩৭ জন। এই সময়ে নয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। ৪৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২১টি দুর্ঘটনায় ১১২ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৩৭ জন, বাসের যাত্রী ৩০ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ২৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী সাতজন, থ্রি-হুইলার যাত্রী ১০৩ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র) ৩৪ জন এবং রিকশা-বাইসাইকেল আরোহী আটজন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮১টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৮৭টি শহরের সড়কে এবং চারটি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৩টি পথচারীকে চাপা অথবা ধাক্কা দেয়া, ৬০টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং সাতটি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ত্রুটিপূর্ণ সড়ক; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ-র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।
সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে যে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সূত্র : ইউএনবি



