খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

আত্মগোপনে থাকা নিক্সন চৌধুরীর ফেসবুকে পোস্ট

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা ছাড়াও সাবেক এই সংসদ সদস্য ও যুবলীগের মাফিয়া নেতা হিসেবে পরিচিত নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনেও মামলা হয়েছে থানায়।

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

Location :

Faridpur
নিক্সন চৌধুরীর ভেরিফাইড ফেসবুকে করা পোস্ট
নিক্সন চৌধুরীর ভেরিফাইড ফেসবুকে করা পোস্ট |ছবি ফেসবুক থেকে নেয়া

‘জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে শেখ হাসিনাকে আবারো ফিরিয়ে আনবে জনগণ ইনশাআল্লাহ।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগেই আত্মগোপনে চলে যাওয়া ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে দীর্ঘদিন পর নিজের উপস্থিত জানান দিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফেলে শেখ হাসিনার মতোই এলাকা ছেড়ে পালান নিক্সন চৌধুরী। তবে এখন তিনি ফেসবুকে সরব হয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিক্সন চৌধুরী তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই পোস্টটি দেন।

সেখানে তিনি দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে যায়নি। লাশের মিছিলে দাঁড়িয়ে রাজনীতি নয়, তাই একটু সরে দাঁড়িয়েছে মাত্র।’

তিনি লিখেছেন, ‘লক্ষ কোটি নেতাকর্মীর ত্যাগ ক্ষমতা যে তার কাছে উপভোগ্য কোন বিষয় নয়, তাঁর প্রমান শেখ হাসিনা দিয়েছেন।’ ‘আবারো প্রকম্পিত হবে রাজপথ জয় বাংলার স্লোগানে, বাংলার জনগণ তোমাকে আবারো ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।’

তার এই ফেসবুক পোস্টে দলীয় স্লোগান লিখে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তবে তার সমালোচনা করে অসংখ্য বিরূপ মন্তব্যও করা হয়েছে সেখানে। তাতে ওই এলাকায় তার অনুসারীরা এখন ভোল পাল্টে দলবদলে ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন কেই কেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা ছাড়াও সাবেক এই সংসদ সদস্য ও যুবলীগের মাফিয়া নেতা হিসেবে পরিচিত নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনেও মামলা হয়েছে থানায়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালিয়ে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিপুল অবৈধ ধনসম্পদের সন্ধান পেয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৬২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন এবং প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদক।

এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ২৩ অক্টোবর দুই দফায় নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা হয়েও শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার সংসদের সদস্য বনে যান মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ ও দেশের বাইরে বিপুল সম্পদ অর্জন ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠে। তার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে সরকারি কর্মকর্তাদেরও হেনস্তা হতে হতো। সাধারণ মানুষ ছিলেন জিম্মি।

ভাঙ্গার আজিমনগরে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বন্দি করে তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে লিখে নেন বিপুল সম্পত্তি।

এছাড়া অবৈধভাবে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর বালি উত্তোলন করে বিলের জমি ভরাট করে তৈরি করেন তার প্রাসাদোপম বাসভবন। সেখানে দেশবিদেশের মূল্যবাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর সাজানো তার এই বাসভবন।

তার নিজের ও পরিবারের নামে হাজার বিঘার বেশি ভূমির মালিকানা রয়েছে। রয়েছে ঢাকার পূর্বাচল, আদাবর, গুলশান ও বনানীতে প্লট ও ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় রয়েছে বাড়ি। ফরিদপুরে নিজের বাড়িতে বানিয়েছেন আস্ত একটা চিড়িয়াখানাও।

তাঁর রাজকীয় চলাফেরা ও রাজনৈতিক গণসংযোগের কর্মসূচিতে তীব্র ভাষায় কটূক্তি ও হুমকিধামকি দিতেন প্রতিপক্ষকে। তার এই উগ্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ফরিদপুর জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান।

দুদকের মামলায় গত ২০ এপ্রিল ঢাকার মহানগর স্পেশাল সিনিয়ন জজ আদালতের নির্দেশে নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে গুলশানে থাকা একটি ফ্ল্যাট, গ্যারেজ ও কমনস্পেস জব্দ করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষের দিকে ফরিদপুরের নির্বাচনী এলাকায় এসে তিনি ছাত্রজনতার আন্দোলনের হামলার নেতৃত্ব দেন। তবে আগস্টের শুরুর দিকে ঢাকায় ফিরে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার আগেই তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি।

তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া বিএনপির মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে ভাঙ্গা থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয় নিক্সন চৌধুরী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জনকে।

পুলিশ এসব মামলায় তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও এখনো গ্রেফতার এড়িয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন তারা এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না তাকে।

নিক্সন চৌধুরী যা লিখেছেন তার ফেসবুক পোস্টে

“আমি গর্বিত, বঙ্গবন্ধু কন্যার আদর্শকে বুকে ধারণ করে, সব সম্পর্কের কথা ভুলে, এমন একটি মানুষের সংস্পর্শে এসে রাজনীতির মহাকাব্য রচনা হবে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে, আমি ধন্য আপনার আদম্য নেতৃত্বের জন্য, আমি পৃথিবীর কাছে চিৎকার করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধুর রক্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশ বিক্রি করে যায়নি, লাশের মিছিলে দাঁড়িয়ে রাজনীতি নয়, তাই একটু সরে দাঁড়িয়েছে মাত্র, লক্ষ কোটি নেতাকর্মীর ত্যাগ ক্ষমতা যে তার কাছে উপভোগ্য কোন বিষয় নয়, তাঁর প্রমান তিনি দিয়েছেন, আবারো প্রকম্পিত হবে রাজপথ জয় বাংলার স্লোগানে, বাংলার জনগণ তোমাকে আবারো ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ, আমরা গর্বিত তোমার মত মায়ের জন্য।”