‘আমিই নজরুল সম্মাননা’ পেলেন খিলখিল কাজী, ইয়াসমিন মুশতারী ও অনুপম হায়াৎ

সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন— জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংগীতশিল্পী নজরুল-দৌহিত্রী খিলখিল কাজী, প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং নজরুল গবেষক ও লেখক অনুপম হায়াৎ।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় নজরুল চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র ‘আমিই নজরুল’ আয়োজন করে ‘নজরুল স্মরণে’ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তিনজন নজরুল গুণীকে ‘আমিই নজরুল’ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন— জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংগীতশিল্পী নজরুল-দৌহিত্রী খিলখিল কাজী, প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং নজরুল গবেষক ও লেখক অনুপম হায়াৎ।

খিলখিল কাজী বলেন, ‘সম্মাননা পেয়ে গর্ববোধ করছি। আমি দাদু নজরুল ইসলামকে পাশে পেয়ে বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারে হাসি-গান ছিল জীবনের অংশ। দাদু ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে স্তব্ধ হয়ে যান। তারপর থেকে তিনি যেন শিশুর মতো হয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় দাদি প্রমীলা নজরুল তার সব কাজে পাশে থেকেছেন। তাদের বাসায় সে সময় অনেকেই কবিকে দেখতে আসতেন। ছাত্রছাত্রীদের গানবাজনার আসরও বসত। এতে কবি আনন্দ পেতেন, মনে হতো তিনি আবার কথা বলা শুরু করবেন।’

তিনি বলেন, ‘দাদু ধর্মের চেয়ে মানুষকে ভালোবাসতেন। তিনি সারা জীবন অত্যাচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। ধর্মের বেড়া ভেঙে মানুষকেই বড় করে দেখেছেন। মানুষের চেয়ে মহান কিছু নেই— এই জয়গান তিনি গেয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘কবির রচনা ও দর্শন বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। নজরুল সব ধর্মের মানুষকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তার কথা ও গান শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোতে কবির জন্মদিন ও প্রয়াণ দিবস পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলকে পৌঁছে দেয়া জরুরি।’

ইয়াসমিন মুশতারী বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হবে— এই শিক্ষা আমাদের নজরুল শিখিয়েছেন। নজরুলকে ভালোবাসা মানেই বাংলাদেশকে ভালোবাসা। নজরুল মানেই বাংলাদেশ। তিনি যে অমূল্য লেখা ও সৃষ্টিকর্ম আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সেগুলো ছড়িয়ে দিতে পারলেই বাংলাদেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে।’

অনুপম হায়াতের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করে তার ছেলে ইশতিয়াক রহমান। বাবার লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময়ে বলেন, ‘আমিই নজরুল সংগঠনের নাম উচ্চারণ করলেই নজরুলের উপস্থিতি অনুভব করি। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে নজরুলচর্চা আরো বিকশিত হবে। কাজী নজরুল ইসলাম একজন মহাসমুদ্র। সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র—সকল শাখায় তিনি অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন। মানবকবি নজরুল বেঁচে থাকলেই আমরা আমাদের অস্তিত্বে টিকে থাকব।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে দেন ‘আমিই নজরুল’-এর নির্বাহী পরিচালক আবু সাঈদ।

তিনি বলেন, ‘আমিই নজরুল চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত নজরুল নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে কাজ করে যাচ্ছে। সে বছরই এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তরুণ প্রজন্মের কাছে কবির সাম্যবাদী চিন্তা ও মানবিক ভাবনা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ।’

অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: এমরান জাহান, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি, কবি রোকেয়া ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনুবাদক ড. এলহাম হোসেন, নজরুল গবেষক নাসির আহমেদ, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দারসহ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী, আমিই নজরুল পরিচালক উম্মে রুমা ট্রফি, সদস্য শাহিনা পারভীন, শায়লা রহমান, সংগীতা পাল, ইশরাত জাহান, মো: সম্রাট, মোহনা রেজা ও অদ্বিতীয়া। নজরুলের অভিভাষণ পাঠ করেন আবৃত্তিকার শওকত আলী তারা। নৃত্য পরিবেশন করেন সেঁজুতি দাস।

অনুষ্ঠানটি সহযোগিতা করে মুক্ত আসর, প্রশিকা, স্বপ্ন’ ৭১ প্রকাশন, কাঠবিড়ালি প্রকাশন ও বইচারিতা।

সূত্র : ইউএনবি