বাংলা একাডেমির ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ সংকলন নিয়ে সমালোচনার ঝড়

‘বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এটি জনগণের টাকায় চলে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে যে সংকলনটি প্রকাশ পেয়েছে তাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কবি-লেখকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

দ্বীন মোহাম্মাদ দুখু
তীব্র সমালোচনার মুখে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ সংকলন
তীব্র সমালোচনার মুখে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ সংকলন |সংগৃহীত

বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছে। সংকলনটির সূচিপত্র বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর লেখক ও পাঠক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ আজম এবং হাসান রোবায়েত ও রওশন আরা মুক্তার সম্পাদনায় প্রকাশিত সংকলনটিতে স্বৈরাচারের দোসরদের যুক্ত করা হয়েছে বলে সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন। সূচিতে থাকা গুটিকয়েক লেখক বাদে অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত অথবা সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।

লেখক ও পাঠক মহল আরো অভিযোগ করছে, বাংলা একাডেমির মতো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে মানের সংকলন প্রকাশ করেছে তাতে উপেক্ষা করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের মূলধারার কবিদের। একাডেমির মহাপরিচালক এবং সংকলনের সম্পাদকরা এই দায় এড়াতে পারেন না।

যদিও হাসান রোবায়েত কবিতা সংকলনের সম্পাদনার দায়িত্ব পেয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘বাংলা একাডেমি থেকে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে লেখা কবিতা নিয়ে খুব দ্রুতই একটি সংকলন হবে। সংকলনটির সম্পাদনার গুরু দায়িত্ব আমার কাঁধে অর্পিত হয়েছে। ২৪-এর অভ্যুত্থান নিয়ে কবিতা লিখেছেন এমন যে কেউ আপনার নজরে থাকলে কমেন্ট বক্সে নাম মেনশন করবেন প্লিজ। আমি তাদের কাছ থেকে কবিতা চেয়ে নেব। আর কেউ যদি সরাসরি আমার মেইলে কবিতা পাঠান অনেক কৃতজ্ঞ থাকব। এটা একটা জাতীয় কাজ। প্রত্যেরকেই আমাকে হেল্প করবেন প্লিজ। একটা ভালো কবিতাও যেন সংকলনে বাদ না যায় এটা নিশ্চিত করা আমার আমানত।’

কিন্তু তিনি তার ‘আমানত’ কতটুকু রাখতে পেরেছেন প্রশ্ন লেখক ও পাঠক মহলের!

এ ব্যাপারে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এটি জনগণের টাকায় চলে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে যে সংকলনটি প্রকাশ পেয়েছে তাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কবি-লেখকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি দেখতে পেয়েছি, এ সংকলনটিতে স্বৈরাচারের দোসরদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই সংকলনটি বাতিল করে নতুন করে আরেকটি সংকলন করা দরকার আর তার দায়িত্ব এমন একজনকে দেয়া দরকার যিনি কবিতার খোঁজখবর রাখেন ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করেন।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ না করা এই সংকলনের প্রকাশের দায়ভার বাংলা একাডেমিকে নিতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের সভাপতি কবি শাহীন রেজা বাংলা একাডেমি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারি পয়সা নষ্ট করে জুলাই আন্দোলন এবং দেশের কবি সমাজকে নিয়ে এমন রসিকতার জবাব কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে। প্রস্তুত হন।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সংকলনটির প্রথম কবিতাটি একজন চিহ্নিত ফ্যাসিস্টের দোসরের। যিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৭ জুলাই বাংলা একাডেমি ঘেরাও করা হবে এবং জুলাই চেতনার নামে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও সংকলনটির সম্পাদকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের ব্যানারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতার নামে ফ্যাসিস্ট লালন ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে আগামী রোববার (২৭ জুলাই) লাল জুলাইয়ের কবিতা পাঠ ও বাংলা একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, জুলাই আন্দোলনের পক্ষের লেখক-কবিরা বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংকলনটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন।