কবি ফররুখ আহমদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার

কবি ফররুখ আহমদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার; ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন তিনি।

কবি ফররুখ আহমদ
কবি ফররুখ আহমদ |সংগৃহীত

আযাদ আলাউদ্দীন
শোন মৃত্যুর তূর্য নিনাদ, ফারাক্কা বাঁধ... ফারাক্কা বাঁধ... কিংবা বৃষ্টি এলো কাশবনে, জাগলো সাড়া ঘাসবনে/বকের সারি কোথা রে, লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে... এমন অসংখ্য জনপ্রিয় এবং কালজয়ী ছড়া, কবিতা ও গানের জনক কবি ফররুখ আহমদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল রোববার।

১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনে ইন্তেকাল করেন এ মহান কবি।

ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খান সাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ও রওশন আখতারের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। ১৯৩৭ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৩৯ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজে ১৯৩৯ সালে দর্শন বিষয়ে, পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ-তে ভর্তি হন। কিন্তু নানাবিধ কারণে এখানেই অ্যাকাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। ১৯৪৩ সালে আইজি প্রিজন অফিস ও ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাই অফিসে স্বল্পকাল চাকরি করেন।

এরপর সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা নিয়েই জীবনের বৃহত্তর সময় অতিবাহিত করেন ফররুখ আহমদ। তিনি রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা ও বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পী ছিলেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস স্বীকৃত একজন অসাধারণ জননন্দিত কবি ফররুখ আহমদ। স্বপ্নরাজ্যের সিন্দাবাদ, ঐতিহ্যের কবি ফররুখ আহমদ বাংলা-সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল তারকা। ছন্দের কবি, সঙ্গীত ঝঙ্কারের কবি ফররুখ আহমদের কাব্যে ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বদেশ, সমকাল ফুটে উঠেছে সার্থকভাবে। অফুরণ সৌন্দর্য, উদাস কল্পনা, রূঢ় বাস্তবতা, প্রদীপিত আদর্শ, সমুদ্রবিহার, রোমান্টিকতা, প্রেম প্রভৃতি তার কবিতার এক মৌলিক চরিত্র নির্মাণ করেছে।

গানের ভুবনেও তার পদচারণা ছিলো সর্বত্র। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে শিল্পী ও গীতিকার হিসেবে তার ছিল ব্যাপক খ্যাতি। শিশু সাহিত্য, প্রবন্ধ, নাটক, অনুবাদ সাহিত্যেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

তার প্রথম ও অন্যতম কাব্যগ্রন্থ সাত সাগরের মাঝি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া আজাদ কর পাকিস্তান (১৯৪৬), সিরাজাম মুনিরা (১৯৫২), নৌফেল ও হাতেম (১৯৬১), মুহূর্তের কবিতা (১৯৬৩), হাতেম তায়ী (১৯৬৬), পাখির বাসা (১৯৬৫), হরফের ছড়া (১৯৬৮), নতুন লেখা (১৯৬৯), ছড়ার আসর (১৯৭০), নয়া জামাত (১৯৫০), হে বন্য স্বপ্নেরা (১৯৭৬), ইকবালের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮০), চিড়িয়াখানা (১৯৮০), কাফেলা (১৯৮০), হাবেদা মরুর কাহিনী (১৯৮১), সিন্দাবাদ (১৯৮৩), কিস্সা কাহিনী (১৯৮৪), ফুলের জলসা (১৯৮৪), তসবির নামা (১৯৮৬), মাহফিল (১৯৮৭), ফররুখ আহমদের গল্প (১৯৯০), ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক কাব্য (১৯৯১), দিলরুবা (১৯৯৪) প্রভৃতি তার অমর সাহিত্যকীর্তি।

ফররুখ আহমদের লেখা গান আজও আত্নবিশ্বাসী করে তোলে নতুন প্রজম্মকে-

‘তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া, তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া’

কিংবা

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?/ এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে? /সেতারা হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে? / তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে; / অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি...

এমন অসংখ্য গান-কবিতা আর সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে যুগ থেকে যুগান্তরে বেঁচে থাকবেন কবি ফররুখ আহমদ।