১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দিলো মার্কিন আদালত

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প - ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সোমবার রায় দিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয় উল্টে দেবার জন্য যেকোনো আনুষ্ঠানিক, সরকারি পদক্ষেপের জন্য বিচার থেকে দায়মুক্তি পাবেন। তবে বেসরসরকারি, অনানুষ্ঠানিক কাজের জন্য কোনো দায়মুক্তি নেই।

ট্রাম্পকে কোন বিষয়ে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সেই সিদ্ধান্ত নিম্ন আদালতের হাতে ছেড়ে দেয়।

এই সিদ্ধান্ত প্রায় নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের ফলাফল উল্টানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিচার ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে শুরু হবে না। এই নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী, এবং তিনি পুনরায় মুখোমুখী হবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের, যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তাকে ২০২০ সালে পরাজিত করেছিল।

ট্রাম্প ২০২০ নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে কোনো অপরাধমূলক কাজ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দাবি করে আসছেন যে ভোট গণনায় অনিয়মের কারণে তিনি হোয়াইট হাউসে আরও চার বছর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

ট্রাম্প যদি ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে তিনি ২০২০ নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার মুখে পড়তে পারেন। কিন্তু তিনি যদি জয়ী হন, তাহলে তিনি দেশের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনেরালকে নির্দেশ দিতে পারেন মামলা বাতিল করতে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত, নয়জন বিচারপতির ৬-৩ ভোটের সিদ্ধান্তে ঘোষণা দেয়, তাদের আনুষ্ঠানিক, সরকারি কাজের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের বিচার থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি আছে। তবে যেসব কর্মকাণ্ড সরকারি কাজের বাইরে বলে গণ্য হবে, সেগুলোর জন্য দায়মুক্তি পাবেন না।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চার বছর আগের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে যে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠায়।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস লেখেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আলাদা করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের যে অবকাঠামো, সেখানে একজন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ধরনের কারণে, সাংবিধানিক ক্ষমতার অধীনে নেয়া পদক্ষেপের জন্য ফৌজদারি মামলা থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি তার প্রাপ্য। 'এবং সকল আনুষ্ঠানিক কাজের জন্য তার অন্তত আনুমানিক দায়মুক্তি প্রাপ্য। বেসরকারি কাজের জন্য কোনো দায়মুক্তি নেই,' তিনি লেখেন।

তিনজন বিচারপতি রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। বিচারপতি সোনিয়া সোতোমায়র বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টদের অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে প্রেসিডেন্টের প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। 'আমাদের সংবিধান এবং প্রশাসন ব্যবস্থার ভিত্তি, যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আজকের রায় সেই মূল্যবোধকে বিদ্রূপ করেছে,' তিনি বলেন।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রায়ের কিচ্ছুক্ষণ পরেই তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম নেটওয়ার্ক-এ লেখেন, 'আমাদের সংবিধান এবং গণতন্ত্রের জন্য বিশাল জয়। আমেরিকান হিসেবে আমি গর্বিত।'

যে মামলা আদালত বিবেচনা করে, সেখানে ট্রাম্প দাবি করেন, তার নির্বাহী দায়মুক্তি আছে। অর্থাৎ, নির্বাচনে তার পরাজয় উল্টে দেয়ার প্রচেষ্টায় তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি জিতেছেন, ভোট গণনায় অনিয়মের কারণে হারেননি।

ট্রাম্প পাঁচ ডজন মামলা হেরেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেন তাকে কারচুপি করে পুননির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা হয়। তিনি আজ পর্যন্ত সেই অসত্য দাবি করে আসছেন, এবং মাঝে-মধ্যে বলেন যে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। এ’বছর ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প এবং বাইডেন পুনরায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ ওয়াশিংটনে দায়ের করা এক মামলায় ট্রাম্পকে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করার চারটি অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

ট্রাম্প দাবি করেন, ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে তাকে পুনঃনির্বাচিত হতে দেয়া হয়নি। স্মিথ অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তার দাবিকে অনুমোদন দেয়ার জন্য জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সাহায্য চেয়েছিলেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, যখন কংগ্রেস ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রত্যয়ন করার জন্য ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি বৈঠকে বসেছিল, তখন ট্রাম্প তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স-এর উপর চাপ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বাইডেনের জয়ের প্রত্যয়ন আটকে দেন বা বিলম্বিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে নির্ধারণ করা হয় না। একটি ইলেক্টরাল কলেজ ভোটে দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যের ভোটাররা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পক্ষের ইলেক্টরদের নির্বাচিত করেন। প্রতিটি রাজ্যের ইলেক্টর সংখ্যা ঠিক করা হয় তার মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে।

সুপ্রিম কোর্টের মামলায় ট্রাম্প দাবি করেন যে তিনি যে কাজ করেছেন সেটা ক্ষমতায় থেকে যাবার জন্য অপরাধমূলক কাজ ছিল না। তার দাবি, তিনি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সেজন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে না। ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেন, তার পদক্ষেপগুলো ছিল 'প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর সরকারি দায়িত্বের মূল্য কেন্দ্র।'
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement