ট্রাম্পের গোলান স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
- আনাদোলু, বিবিসি
- ২৭ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৮
সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখণ্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ইস্যুতে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসঙ্ঘে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। সৌদি আরব, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কাতার ও লেবাননও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক দূত মিখাইল বোগডানোভ বলেছেন, গোলান নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেআইনিভাবে গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। এ বিষয়ে ঘোষণাপত্রে ট্রাম্পের স্বাক্ষরেরও কঠোর নিন্দা জানায় দেশটি।
সৌদি সরকারের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব মেনে নেয়ার যে উদ্যোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিয়েছেন, তা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড এবং তা আরবের অংশ হিসেবেই থাকবে, সেকথা বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা দূর করবেন বলেও আশা করা হয় ওই বিবৃতিতে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্রিটেন গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব স্বীকার করে না। আমাদের এ সংক্রান্ত অবস্থান পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের পক্ষে ট্রাম্প যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ফ্রান্স এই দখলদারিত্ব স্বীকার করে না।
জার্মানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের স্বীকৃতি না দেয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছে কানাডা। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুসোগলু বলেছেন, ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরো একবার আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করল। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্ত কখনো ইসরাইলি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেবে না। কাতার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোলান মালভূমি থেকে ইসরাইলকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, অন্য দেশের ভূখণ্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার বিদেশী নেতাদের নেই।
জেরুসালেম বা আরব অঞ্চলের সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত বৈধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
আব্বাস বলেছেন, জেরুসালেম এবং গোলান বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করেছে। এর আগে ২৫ মার্চ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখণ্ডের স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদিন এ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় সিরীয় ভূখণ্ড গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল।