ট্রাম্প এবং চীনের শি এক অপরের পণ্যের উপর আরোপ করা শুল্ক নিয়ে আলাপ করতে যাচ্ছেন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের নেতা শি জিনপিং একে অপরের দেশের পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা নিয়ে শিগগিরই এক গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন আলাপ করতে যাচ্ছেন।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। চীন দ্রুত ঘোষণা করে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা এবং এলএনজি গ্যাসের ওপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং কিছু যানবাহনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পার্টনারের অন্য দু’টি, মেক্সিকো আর কানাডার বেশিভাগ পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা থেকে ট্রাম্প সোমবার এক মাসের জন্য পিছিয়ে আসেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাদের সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক মাদক ফেন্টানিলের চোরাচালান আটকাতে আরো সচেষ্ট হতে রাজি হয়েছেন। এই মাদক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাখ লাখ আমেরিকানকে হত্যা করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল চোরাচালান বন্ধে চীনকে চাপ দেয়ার জন্য চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। মেক্সিকোর মাদক প্রস্তুতকারী কার্টেলগুলো ফেন্টানিল তৈরি করতে যে রাসায়নিক ব্যবহার করে, তার বড় সূত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে চিহ্নিত করেছে।
চীন বলেছে তারা বেআইনি মাদক বাণিজ্য এবং রাসায়নিক শিল্প দমন করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আশা করছি, চীন আমাদের ফেন্টানিল পাঠানো বন্ধ করবে এবং তারা যদি না করে, তাহলে শুল্ক আরো বাড়তে থাকবে।’
হোয়াইট হাউস প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভেট বলেন, ‘শি’র সাথে ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপের সময় ঠিক করা হচ্ছে এবং তা খুব শিগগিরই হবে।’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় ২০১৮ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন এক বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয় যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ট্রাম্প বার বার চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ান এবং বেইজিং প্রতিবার পাল্টা জবাব দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার চীন আগের থেকে অনেক বেশি প্রস্তুত। তারা অনেক পদক্ষেপ ঘোষণা করে যা শুধু শুল্কে সীমাবদ্ধ নেই এবং সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রযোজ্য হবে। একই সাথে চীন তার বাণিজ্য-নির্ভর অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার ব্যাপারেও সতর্ক।
চীনের স্টেট কাউন্সিল ট্যারিফ কমিশন এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক ঘোষণা করে বলে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এক তরফা শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। এটা যে শুধু নিজের সমস্যা সমাধানে কোনো কাজ দেবে না তাই নয়, এর ফলে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির ওপর প্রভাব কম হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি রফতানিকারক, তারা চীনে খুব একটা রফতানি করে না।
ইউ এস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিন্সট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে চীনে ১৭ হাজার ৩২৪ কোটি ৭০ লাখ কিউবিক ফিট এলএনজি রফতানি করে, যা ছিল তার মোট প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির ২.৩ শতাংশ।
মেক্সিকো এবং কানাডা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার মেক্সিকো এবং কানাডার পণ্যর ওপর আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে ট্রাম্পের আলাপের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক মাদক ফেন্টানিল চোরাচালানি আটকাতে সীমান্তে ১০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য মোতায়েন করবেন বলে জানানোর পর ট্রাম্প তার ঘোষণা দেন।
শেইনবম ট্রাম্পের সাথে কথা বলার পর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা এক বার্তায় বলেন, ‘মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালান, বিশেষ করে ফেন্টানিল, বন্ধ করার লক্ষ্যে মেক্সিকো উত্তর সীমান্তে পাহারা জোরদার করবে। মেক্সিকোতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছে।’
মেক্সিকান নেতা যোগ করেন যে, দু’দেশ নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাবে এবং এখন থেকে এক মাসের জন্য শুল্ক আরোপ করা স্থগিত থাকবে।
ট্রুডো বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সরবরাহ আটকাতে তিনি কানাডার সীমান্তে নতুন প্রযুক্তি এবং লোকবল নিয়োজিত করবেন।
ট্রুডো সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমার ভালো আলাপ হয়েছে। আমরা একসাথে কাজ করার সময় প্রস্তাবিত শুল্ক অন্তত ৩০ দিন স্থগিত থাকবে।’ সূত্র : ভিওএ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা