যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ওয়ালজ ও ভ্যান্সের নির্বাচনী বিতর্ক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৫
ডেমক্র্যাটিক দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ ও রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর জেডি ভ্যান্স, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৩৫ দিন আগে গত মঙ্গলবার নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন।
তারা মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট, অভিবাসন, কর প্রয়োগ, গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরস্পর বিরোধী অভিমত তুলে ধরেন। তারা তাদের নীতি বিষয়ক জোরালো মতভেদ তুলে ধরলেও ব্যক্তিগত আক্রমণ তেমন একটা করেননি।
এই দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বি নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পরস্পরকে তীব্রভাবে আক্রমণ করলেও, বিতর্কে তাদের মনোভাব ছিল উষ্ণ। তারা বরঞ্চ তীব্র আক্রমণের বিষয়টি যেন তাদের নির্বাচনী টিকেটের সর্বোচ্চ প্রার্থী ডেমক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য রেখে দিলেন।
ভ্যান্স প্রশ্ন করেন হ্যারিস কেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুদ্রস্ফীতি, অভিবাসন ও অর্থনীতির দিকে নজর দেননি।
তিনি সমানে হ্যারিসের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যান যা ট্রাম্প গত মাসে হ্যারিসের সাথে বিতর্কে করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ভ্যান্স বলেন, ‘মধ্যবিত্তের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কমালা হ্যারিসের যদি এত মহত্ পরিকল্পনা থাকে, তা হলে যে কাজটি তাকে আমেরিকান জনগণ সাড়ে তিন বছর আগেই দিয়েছিলেন তার উচিত ছিল এখনই তা সম্পন্ন করা, এই পদোন্নতি চাওয়ার সময় নয়।
ওয়ালজ ট্রাম্পকে অস্থিতিশীল নেতা বলে বর্ণনা করেন যিনি কোটিপতিদেরই কেবল অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং অভিবাসন সম্পর্কে ভ্যান্সের সমালোচনা তাকে ফিরিয়ে দিয়ে এ বছর আরো আগে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে দ্বিদলীয় প্রস্তাব পরিহার করতে কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য তিনি ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন।
অভিবাসন সম্পর্কে ওয়ালজ বলেন, ‘আমরা, বেশিরভাগ লোকই‘ এর সমাধান করতে চাই। এটি করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চার বছর সময় ছিল, এবং তিনি আপনাদের, আমেরিকানদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিষয়টা কতখানি সহজ হবে।’
নিউ ইয়র্কের সিবিএস ব্রডকাস্টিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কের শুরুতেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের অব্যাহত আক্রমণ এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সঙ্কট প্রসঙ্গটি আসে।
ওয়ালস বলেন ট্রাম্প অনেক বেশি ‘নড়বড়ে’ এ ব্যাপারে। এই ক্রমবর্ধমান সংঘাত মোকাবিলার জন্য আরো শক্ত মনোভাব সম্পন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে, ভ্যান্স জোর দিয়েই বলেন, ট্রাম্প তার আমলে বিশ্বকে আরো বেশি নিরাপদ করে গেছেন।
যখন জানতে চাওয়া হয় যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগে ভাগেই আক্রমণকে সমর্থন করবেন কি না, জবাবে ভ্যান্স বলেন, বিষয়টি তিনি ইসরাইলের বিবেচনার জন্য রাখবেন, তবে ওয়াল্জ এই প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর দেননি।
৬০ বছর বয়সী ওয়ালস হচ্ছেন মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের লিবারেল গভর্নর ও হাই স্কুলের একজন সাবেক শিক্ষক এবং ৪০ বছর বয়সী ভ্যান্স হচ্ছেন একজন জনপ্রিয় লেখক এবং ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সেনেটর। তারা উভয়ই নিজেদের আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের সন্তান হিসেবে তুলে ধরেন। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে পরস্পরবিরোধী।
ট্রাম্প টেলিভিশনে এই বিতর্ক দেখার সময়ে তার ট্রুথ সোশ্যাল সাইটে বিতর্কটি ঘন ঘন পোস্ট করছিলেন, কখনো বা এক মিনিটে দুই বার করে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এই শেষ বিতর্কে উভয় প্রতিপক্ষ পরস্পরকে আঘাত হানার চেষ্টা করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে ভাইস প্রেসিডেন্টদের বিতর্ক খুব উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে কিন্তু তা নির্বাচনের ফলাফলে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। তবে তা সত্ত্বেও জনগণের মতামতে সামান্য পরিবর্তনও পাঁচ সপ্তাহ আগে এই তুমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে পাল্টে দিতে পারে।
ওয়ালজয়ের কাছে এ সপ্তাহের একটি খবর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় যে ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়ারে সহিংস অভিযানের সময়ে তিনি চীনে ছিলেন না, যেমনটি তিনি আগে দাবি করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি বোকামি করি। আমি ওই খানে সে বছর গ্রীষ্মকালে যাই এবং সে সম্পর্কে আমি ভুল বলি। কাজেই আমি গণতান্ত্রিক বিক্ষোভের হংকং ও চীনে ছিলাম এবং সেখান থেকে আমি শিখলাম সরকারে থাকার মানেটা কি।
এ দিকে ভ্যান্স, যিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন, এবার তাকে সমর্থন করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ভুল বলেছিলাম। ভুল বলেছিলাম, প্রথমত কারণ আমি মিডিয়ায় আসা কিছু এমন কাহিনী বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যা পরে দেখা গেল তার সম্পর্কে বানোয়াট কাহিনী। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান জনগণের জন্য কাজ করেছেন।’
সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারক নিয়োগে ওয়ালজ, ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করেন যারা গোটা দেশজুড়ে প্রায় অর্ধ শতাব্দি ধরে চলে আসা গর্ভপাত নাকচ করার আদালতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। বিষয়টি রিপাবলিকানদের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।
ওয়ালজ বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প গোটা বিষয়টিকে নাড়িয়ে দেন। তিনি গর্ব করেই বলেন, তিনি বিচারকদের এনে ভালোই করেছেন যারা রো বণাম ওয়েড মামলাটি পাল্টে দেয়।’
গর্ভপাতের ব্যাপারে অনেক বেশি রক্ষনশীল মনোভাবে জন্য পরিচিত ভ্যান্স মঙ্গলবারের এই বিতর্কে খানিকটা নরম সুরেই বলেন, আগে সে রকমটি মনে করলেও তিনি জাতীয় স্তরে এটি নিষিদ্ধ করা সমর্থন করেননি।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের মতামত ছিল গর্ভপাত সীমিত করার ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্যেরই সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।
সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে, ট্রাম্প বলেন, জাতীয় স্তরে তিনি ভেটো দেবে তবে তার কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার এক বিতর্কে তিনি সেটা করবেন কি না সে ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
২০১৬ সালে ‘হিলিবিলি এলিজি’ নামের একটি জনপ্রিয় স্মৃতিকথা লেখা সত্ত্বেও ভ্যান্স সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদাতাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ২২-২৩ সেপ্টেম্বরে নেয়া রয়টার্স/ইপসোস-এর একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ৫১ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটাররা বলছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি সমর্থনযোগ্য নন, ৩৯ শতাংশ তাকে সমর্থন করছেন।
এদিকে, ওয়ালজকে সমর্থন করছেন নিবন্ধিত ভোটারদের ৪৪ শতাংশ, তবে ৪৩ শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন করছেন না।
১০ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক মাত্র বিতর্কে হ্যারিসকে বিপুলভাবে বিজয়ী বলে দেখা হচ্ছে।
তবে এই চিত্র সত্ত্বেও এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জাতীয় জরিপগুলোতে হ্যারিস এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেক জরিপেই দেখা যাচ্ছে সাতটি অঙ্গরাজ্যে তাদের সমর্থন মোটামুটি কাছাকাছি এবং তারাই নির্ধারণ করবে নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা