ব্রিটেনে ৪০ বছরে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, জনজীবনে তীব্র চাপ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ আগস্ট ২০২২, ১০:০৮, আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১২:২৫
ব্রিটেনে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গেল জুলাই মাসেই শুধু ভোক্তাদের পণ্যমূল্য শতকরা ১০.১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির পর এই হার সর্বোচ্চ। ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে ইউরোপ ও বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা স্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনে গত জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতির বার্ষিক হার ছিল শতকরা ৯.৪ ভাগ। মুদ্রাস্ফীতির এমন উল্লম্ফনের ফলে দেশটিতে পরিবারগুলোর ওপর চাপ তীব্র হয়েছে। তারা ব্যয় সঙ্কোচনের পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন।
বুধবার এই মুদ্রাস্ফীতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের উদ্বেগ কমাতে পারেনি এই মুদ্রাস্ফীতি। ফলে পণ্যমূল্যের এই চাপ আসন গাড়তে পারে ক্রমশ। খবর আল জাজিরা’র।
এ মাসের শুরুর দিকে মন্দার আশঙ্কা করে হুঁশিয়ারি দেয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। একইসাথে তারা সুদের হার শতকরা ০.৫ ভাগ বাড়িয়ে ১.৭৫ ভাগ করে। ১৯৯৫ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ সুদের হার বৃদ্ধি।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল যে, দেশে মুদ্রাস্ফীতি অক্টোবরে সর্বোচ্চ ১৩.৩ ভাগে পৌঁছে যেতে পারে। এ সময়ের ভেতর বাড়তে পারে বিদ্যুতের দামও।
অ্যাসেট ম্যানেজার আবারডন (এবিআরডিএন)-এর সিনিয়র অর্থনীতিবিদ লুক বার্থোলোমিউ বলেন, প্রতিটি মুদ্রাস্ফীতি যখন ঊর্ধ্বমুখী হয় তখন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নিজেই কঠোরতা অবলম্বন করে। মুদ্রাস্ফীতির চাপের সাথে তা মিলে ক্রমশ মন্দা বেড়ে চলে।
এ সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি জনমত জরিপের আয়োজন করে। তাতে বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদের মতো তিনিও প্রত্যাশা করেন, সেপ্টেম্বরে পরবর্তী মিটিংয়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তার সুদের হার আরো ০.৫ ভাগ বৃদ্ধি করে শতকরা ২.২৫ ভাগ করবে।
অন্যদিকে দুই বছরে ব্রিটিশ সরকারের বন্ডের দাম ২০২১ সালের জুনের পর বৃদ্ধে পেয়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এই হার ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের বুধবারের তথ্য জানায় যে, মৌসুমি নয় এমন ভিত্তিতে জুন থেকে জুলাইয়ে মূল্য বেড়েছে শতকরা ০.৬ ভাগ। বার্ষিক খুচরা মূল্যে মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২.৩ ভাগ। ১৯৮১ সালের মার্চের পর এই হার সর্বোচ্চ।
তবে কেবল ব্রিটেনেই মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে এমন নয়। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। সবাইকেই লড়তে হচ্ছে এর বিরুদ্ধে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ৪০ বছরের মধ্যে জুনে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ শতকরা ৯.১ ভাগ। তা কিছুটা কমে জুলাইয়ে দাঁড়ায় শতকরা ৮.৫ ভাগ।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাবি বলেন, মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনই মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে ইউরোপে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ব্রিটেনেও মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধীরগতিতে হলেও তা এ বছরের শেষের দিকে মন্দায় পৌঁছাতে পারে। তবে ডাটা থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে আসতে শুরু করবে। ১৯৭৭ সালের পর সবচেয়ে বেশি বর্ধিতমূল্য নির্ধারণ করেছে কারখানাগুলো। তা লাফিয়ে বেড়েছে শতকরা ১৭.১ ভাগ।
অন্যদিকে বার্ষিক ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো যে মূল্য পরিশোধ করেছে তা জুনের রেকর্ড শতকরা ২৪.১ ভাগে উঠে যায়। কিন্তু তা সামান্য কমে বার্ষিক শতকরা ২২.৬ ভাগে দাঁড়ায়। মাস থেকে মাসে ‘ইনপুট মূল্যবৃদ্ধি’ হয়েছে শতকরা মাত্র ০.১ ভাগ। ২০২২ সালের পর এটাই সবচেয়ে ধীরগতির বৃদ্ধি। এর কারণ বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়া। ব্রিটেনে বর্তমানে বার্ষিক গৃহস্থালির বিদ্যুৎ বিল দুই হাজার পাউন্ডের নিচে। এক বছর আগের তুলনায় তা দ্বিগুণ।
ধারণা করা হচ্ছে, জানুয়ারিতে তা চার হাজার পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে। এমনটা মনে করে শিল্প বিষয়ক বিশ্লেষক সংস্থা কর্নওয়াল ইনসাইট। ব্রিটেনের লাখ লাখ বাড়ি বর্ধিত বিল দিতে হিমশিম খাবে। এরই মধ্যে সুপারমার্কেট থেকে রিপোর্ট করা হচ্ছে যে, ভোক্তারা সস্তার ব্র্যান্ডগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ডাটা থেকে দেখা যায়, কর্মীদের উপার্জন কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স জুন পর্যন্ত তিন মাসে পতন হয়েছে শতকরা ৪.১ ভাগ। ২০০১ সালে এই রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এরপর এটাই সর্বোচ্চ পতন। এই অবস্থার উত্তরণে কিভাবে সহায়তা করবেন? এমন প্রশ্নে চাপে রয়েছেন ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা দুই প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক।
অন্যদিকে বিরোধী লেবার পার্টি জ্বালানি মূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির লাগাম টানার আহ্বান জানিয়ে আসছে।