২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উঠে যাচ্ছে লকডাউন, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে ব্রিটেনে

উঠে যাচ্ছে লকডাউন, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে ব্রিটেনে - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনাভাইরাসের কারনে দীর্ঘ তিন মাস লকডাউনে থাকা ব্রিটেনের জনজীবন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কোভিড-১৯ এ এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট ৫০ হাজারের মানুষ মারা গেলেও সম্প্রতি মৃতের হার কমতে শুরু করেছে। শুরুর দিকে যেখানে দৈনিক মৃতের সংখ্যা পাঁচ শ'র নিচে দেখা যেত না, সেখানে এখন দৈনিক মারা যাচ্ছে অর্ধ শতাধিক বা তার নিচে।

এদিকে ভাইরাসের প্রকোপ কমার কারণে সরকার শারীরিক দূরত্বের নীতিও পরিবর্তন করার আভাস দিয়েছেন। তবে গণপরিবহনে ফেস মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া দেশটির করোনাভাইরাসের সতর্কতার লেভেলও নামিয়ে চার থেকে তিন করা হয়েছে। দোকান ও অফিস আদালত খুলতে করেছে। উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান করার নিষেধাজ্ঞা। স্কুলে কয়েকটি শ্রেণীর ক্লাস শুরু হলেও সেপ্টেম্বরে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে জানিয়েছে সরকার।

এ মাসের ১৫ তারিখে দীর্ঘ তিন মাস পর লকডাউন শিথিল করায় ব্রিটেনের বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধ ছিল এত দিন।

ভাইরাসের প্রকোপ কমার কারণে সরকার লকডাউন শিথিল করলে রাজধানী লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টারের মতো বড় বড় নগরীর দোকানপাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। তবে অধিকাংশ স্থানেই ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। দোকানের সামনে দেখা গেছে লম্বা লাইন। সবচেয়ে ভিড় হয় প্রাইমার্ক, জারা, স্পোর্টস ডাইরেক্ট, নাইকি, টিকে ম্যাক্স, টপটেন-এর দোকানগুলোতে। অনেক দিন পর বাইরে কেনাকাটা করতে পেরে অনেকেই ছিলেন উচ্ছ্বসিত।

জারা, জন লুইস ও ডেভেনহামস ছাড়া বিভিন্ন কাপড়ের দোকান ৫০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১৫ বিলিয়ন পাউন্ডের অবিক্রিত পণ্য স্টকে রয়েছে। যা তারা দ্রুত বিক্রি করতে ইচ্ছুক। এদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংস্থা। তাদের আশঙ্কা আবারো করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে।

১৫ জুন থেকে ব্রিটেনে গণপরিবহনে চড়তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ অমান্য করলে যাত্রীদের গুনতে হবে ১০০ পাউন্ড জরিমানা। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মানুষ যাতে এই বিধিনিষেধ ঠিকভাবে পালন করে সেজন্য বাস ও রেল স্টেশনগুলোতে তিন হাজারের বেশি অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

জানা যায়, ব্রিটেনে লকডাউন শিথিলের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে মন্থরতা সৃষ্টি করছে করোনা মোকাবেলায় দুই মিটার শারীরিক দূরত্ব নীতি। সরকারি এ নীতি পরিবর্তনে ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চাপও প্রয়োগ করা হয়েছে।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, দুই মিটার দূরত্ব নীতি পর্যালোচনা আগামী সপ্তাহেই মীমাংসা হবে। তিনি বলেন, আমরা বুঝেছি, এ নীতি হোটেল, বার, রেঁস্তোরা ও অন্যান্য পর্যটন ব্যবসাকে কতটা প্রভাবিত করছে। করোনা মোকাবেলায় দুই মিটার দূরত্বে আমাদের অবস্থান অবশ্যই দরকার। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আমাদের এ নীতিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনেরও দরকার হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে দেশটির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানান, টানা তিন মাস লকডাউনের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কেবল শুরু হয়েছে। দুই মিটার দূরত্ব নীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে দ্রুত অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

এদিকে ব্রিটেনের করোনাভাইরাস সতর্কতার স্তর চার থেকে তিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। দেশটির প্রধান মেডিকেল অফিসারেরা শুক্রবার এই ঘোষণা দেন। কোভিড-১৯ এর সতর্কতার স্তর যখন চার ছিলো তখন তা উচ্চ মাত্রায় ছড়ানোর ঝুকিতে ছিলো। তৃতীয় স্তরে আসায় ভাইরাসটি সাধারণ গতিতে ছড়াবে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর ফলে ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে পারে।

হেলথ সেক্রেটারী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, এটি দেশের জন্য একটি বিশাল মুহূর্ত, এতে দেখা যাচ্ছে সরকারের পরিকল্পনা কাজ করছে। সতর্কতা স্তরের হ্রাসের সিদ্ধান্তটি যৌথ বায়োসিকিউরিটি সেন্টারের সুপারিশের পর ঘোষণা করা হয়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল অফিসারেরা এই সিদ্ধান্তে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ব্রিটেনের স্কুলের সকল ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস কক্ষে যেতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন এডুকেশন সেক্রেটারী গ্যাভিন উইলিয়ামসন। তিনি শুক্রবার নিয়মিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই ঘোষণাদেন। এসময় তিনি জানান, সকল ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে সাইনআপ করা হয়েছে। শিশুদের সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কিত গাইডেন্স আগামী পনের দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

গত ২০ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতির কারনে স্কুল বন্ধ হলেও শুধুমাত্র ফ্রন্ট লাইন কর্মীদের সন্তানরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ছিলো। আর এ মাসের শুরুতে নার্সারি, রিসিভশন, ইয়ার ওয়ান এবং ইয়ার সিক্স-এর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। এদিকে ইয়ার টেন ও ইয়ার টুয়েলভ-এর শিক্ষার্থীরা আগামী সপ্তাহ থেকে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

এডুকেশন সেক্রেটারি গ্যাভিন উইলিয়ামসন বলেছেন, এখনো অনেক অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের উদ্বেগ নিরসনের। তিনি বলেন, আমরা শিশুদের সুস্থতা জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

এদিকে করোনার কারণে এত দিন বেশি মানুষের সমাগমে বড় অনুষ্ঠান না করা গেলেও লকডাউন শিথিল হওয়াও ব্রিটেনে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাচ্ছে মানুষ। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশি মানুষ আমন্ত্রণ না করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। আর অনুষ্ঠানে সবাইকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement