ভূমিকম্পে নিখোঁজদের উদ্ধারে কিভাবে অভিযান চালানো হয়
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৩১
তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের জন্য যে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে, তাতে সারা বিশ্ব থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা যোগ দিচ্ছেন।
তবে কিছু দুর্গত এলাকার লোকজন বলছেন, উদ্ধার তৎপরতার গতি বেশ ধীর। স্বজনদের খুঁজে বের করতে কাউকে খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরাতে ও খনন করতে হচ্ছে।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয় কিভাবে?
উদ্ধারকর্মীরা যখন প্রথম ভূমিকম্পের ঘটনাস্থলে পৌঁছেন, প্রথমে তারা বোঝার চেষ্টা করেন যে কোন ধসে পড়া ভবনে আটকে পড়া লোক থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
তারা এটা করেন ‘ফাঁকা’ জায়গা খোঁজার মাধ্যমে- বড় কংক্রিটের ভিম বা সিঁড়ির নিচের জায়গা যেখানে মানুষ থাকতে পারে।
বিল্ডিং ধসে পড়ার সম্ভাবনাও তারা বিবেচনায় নেন। পাশাপাশি অন্যান্য ঝুঁকি যেমন, গ্যাস ও পানির লিক এবং ছাদে অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতিসহ নানা বিপজ্জনক বস্তু সম্পর্কেও তারা খোঁজ-খবর নেন।
উদ্ধার কর্মীরা যখন জীবিতদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, তখন সহায়তা-কর্মীরা বিল্ডিংয়ের নড়াচড়ার দিকে নজর রাখেন এবং কোনো অদ্ভুত শব্দ শোনা যায় কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখেন।
যে ভবনগুলো পুরোপুরি ধসে গেছে, সেগুলোতে সাধারণত অনুসন্ধান করা হয় একেবারে শেষে। কারণ, সেখানে জীবিত মানুষ থাকার সম্ভাবনা খুব কম।
উদ্ধারকারী দলের কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকে কোনো সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দেশের। উদ্ধারকারীরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। তারা জোড়ায় জোড়ায় কিংবা বড় দলে ভাগ হয়ে কাজ করে।
স্থানীয় মানুষও এর সাথে অংশগ্রহণ করেন।
কী ধরনের উদ্ধার সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়?
ধ্বংসস্তূপ সরাতে উদ্ধার কর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। যেমন, মাটি খননকারী ডিগার এবং হাইড্রলিক হাতুড়ি।
বিল্ডিংগুলোর বাইরের বড় বড় কংক্রিটের স্ল্যাবগুলোকে ডিগার দিয়ে একপাশে টেনে নেয়া হয়, যাতে উদ্ধারকর্মীরা ভেতরে আটকে থাকা লোককে দেখতে পান।
ধ্বংসস্তূপের ফাঁক দিয়ে তারা নমনীয় পাইপে বাঁধা ভিডিও সরঞ্জাম ঢুকিয়ে দেন। এভাবে জীবিত ব্যক্তিদের অবস্থান সনাক্ত করেন।
তারা বিশেষ ধরনের সাউন্ড ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করেন, যেটি দিয়ে কয়েক মিটার দূরের খুবই অস্পষ্ট শব্দও শোনা যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে নীরবতা পালন করা হয়। উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য তখন তিনবার আওয়াজ করেন, যাতে কেউ সেই শব্দ শুনতে পেলে তার জবাব দিতে পারেন।
কার্বন ডাই-অক্সাইড ডিটেক্টর দিয়ে অচেতন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হয়। এগুলো সাধারণত বদ্ধ জায়গায় সবচেয়ে ভাল কাজ করে। কারণ, অচেতন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে ওই বদ্ধ জায়গার বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেশি থাকে।
থার্মাল ইমেজিং যন্ত্র দিয়ে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টির বাইরে থাকা আটকে পড়া মানুষদের সনাক্ত করা যায়। এদের দেহের তাপমাত্রা চারপাশের ধ্বংসাবশেষের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়, যেটি ওই যন্ত্রে ধরা পড়ে।
তল্লাশি কুকুরের কাজ কী?
ঘ্রাণশক্তিকে ব্যবহার করে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর ধ্বংসস্তূপে নিচে আটকে পড়া জীবিত মানুষদের শনাক্ত করতে পারে, যেটা মানুষ উদ্ধারকর্মীরা পারেন না।
তল্লাশি কুকুর বড় এলাকাজুড়ে দ্রুত কাজ করতে পারে। ফলে অনুসন্ধান ও উদ্ধারের গতি বেড়ে যায়।
খালি হাত কখন ব্যবহার করতে হয়?
বড় বড় কংক্রিট স্ল্যাব ও অন্যান্য কাঠামো সরিয়ে নেয়ার পর উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের হাত ব্যবহার শুরু করেন। একাজে হাতুড়ি, পিক্যাক্স ও বেলচা, একইসাথে চেইন স, ডিস্ক-কাটার ও রিবার কাটারের মতো ছোট যন্ত্র ব্যবহার করে কংক্রিটের ধাতব বারগুলো কেটে ফেলা হয়।
এই কাজের সময় উদ্ধারকর্মীরা হেলমেট ও গ্লাভসসহ নানা ধরনের সুরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করেন। কারণ, ধ্বংসস্তূপের ধারালো টুকরোয় তাদের আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে তুরস্কের কিছু এলাকায়, যেখানে উদ্ধার প্রচেষ্টার গতি ধীর, সেখানে স্থানীয় লোকজন শীতে জমাট বেধে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খালি হাতেই খনন করছেন।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের এক শহর আদানার এক রেস্টুরেন্ট মালিক বেদিয়া গুশুম বিবিসিকে বলছিলেন, "হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য আমাদের দরকার মোটা গ্লাভস। কারণ, যখন কোনো জীবিত লোকের অবস্থান জানা যায়, তখন সব ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। তখন শুধু খালি হাতে খনন করতে হয়, যেটি আসলে মানুষের ক্ষমতায় কুলোয় না।
“দুর্গত জায়গায় সবল হাতের মানুষ দরকার, আর তাদের দরকার মোটা গ্লাভস।"
উদ্ধার অভিযান কখন শেষ হয়?
জাতিসঙ্ঘের সমন্বয়কারী সংস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আলোচনার পর সাধারণত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো দুর্ঘটনার পর অনুসন্ধান ও উদ্ধারের কাজটি সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে শেষ করা হয়। এক বা দু’দিনের মধ্যে কাউকে জীবিত খুঁজে না পাওয়া গেলে অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে এই সময়সীমার বাইরেও লোকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা যায়।
যেমন, ২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে টানা ২৭ দিন আটকে থাকার পর এক ব্যক্তিকে জীবিত পাওয়া যায়।
আবার ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে এক নারীকে দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর টেনে বের করে আনা হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা