তুরস্কে ভূমিকম্প : উদ্ধারকাজের ধীরগতির অভিযোগে এরদোগানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের ওপর মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে। এরদোগানের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তার সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে এবং এ কারণেই সোমবারের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

বিধ্বস্ত শহরগুলোর বাসিন্দারা বলছেন, দুর্গত লোকজনের কাছে পৌঁছানোর জন্য সরকারের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি।

এ রকম ক্ষুব্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা দেখতে গেছেন। কাহরামানমারাস শহরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি স্বীকার করেছেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল।

এই শহরটিই ছিল দ্বিতীয় ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে।

উদ্ধারকাজে বিলম্ব হওয়ার জন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দর ও রাস্তা-ঘাটকে দায়ী করেছেন। তবে তিনি বলছেন, ‘উদ্ধারকাজ এখন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শুরুতে বিমানবন্দর ও সড়কে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে এসেছে। আগামীকাল আরো সহজ হবে।’

দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর পরিদর্শনের সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সবই আমরা কাজে লাগিয়েছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাষ্ট্র তার কাজ করে যাচ্ছে।’

নিহত ১১ হাজারের বেশি
তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করা ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আট হাজার পাঁচ শ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ছয় শ’ জনেরও বেশি।

এই ভূমিকম্পে দু’দেশে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণহানির এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

উদ্ধারকাজে ধীরগতির অভিযোগ
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে ধীরগতির অভিযোগ করছেন। পরিবারগুলো বলছে যে তাদের যেসব সদস্য নিখোঁজ রয়েছে তাদেরকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় সাহায্য তারা পাচ্ছে না।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর-নগরী ইসকেন্দেরুনের আরজু দেদেগলু বলছেন, তাদের পরিবারের দুই শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধারের জন্য তারা নিজেরাই একটি খনন-যন্ত্র যোগাড় করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তাদেরকে সেটি ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো এখন আর বেঁচে নেই। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কেউ আসেনি। তখন আমরা নিজেরা একটি ডিগার নিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা চায় না আমরা এটা ব্যবহার করি।’

অনেকে বলছে ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পরেও দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণ-সাহায্য পৌঁছায়নি। তুরস্কের হাতায় প্রদেশের আন্তাকিয়া শহরে ৬৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলছেন, ‘ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেছি, কিন্তু এখন ক্ষুধা আর ঠাণ্ডায় মারা যাবো।’

রাজনৈতিক ক্ষোভ
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।

অনেকেই বলছে, এ রকম দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য তুর্কি সরকারের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিলো না।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা কেমাল কিলিচাদারুগলু বলছেন, ‘এ ঘটনায় যদি একজনকেও দায়ী করতে হয়, তাহলে তিনি এরদোগান।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। মে মাসের নির্বাচনের ঠিক আগে এ জরুরি অবস্থা শেষ হবে। প্রায় ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে টেবিল অব সিক্স নামের যে জোট গড়ে ওঠেছে, কিলিচাদারুগলু ওই জোটের প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভূমিকম্পকে প্রচারণায় ব্যবহারের’ অভিযোগ এনেছেন।

সূত্র : বিবিসি